কৃষ্ণকুমার দাস: করোনার পর এবার ইঁদুর (Rat)! মূষিক-সন্ত্রাসে কার্যত রাতের ঘুম উড়ে গেছে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Corporation) শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও কাউন্সিলরদের একাংশের। কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশের জেরে প্যারিস-মুম্বইয়ের মতোই কলকাতাও ইঁদুর নিধনে নামতে পারছে না। বস্তুত সেই কারণেই শহরের লক্ষ লক্ষ ইঁদুর বাহিনীকে বাগে আনতে কাউন্সিলরদের প্রাচীন পদ্ধতি প্রয়োগের দাওয়াই দিলেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
কী দাওয়াই দিলেন তিনি? অতীনবাবু জানালেন,“শহরের রাস্তা ও পার্ক বাঁচাতে শুধু কাউন্সিলর বা পুরসভা নয়, সমস্ত শহরবাসী যদি পথে ইঁদুরের খাবারের জোগান বন্ধ না করেন তবে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে। যদিও ভুক্তভোগী কাউন্সিলররা অনেকে ডেপুটি মেয়রের পরামর্শের পাশাপাশি জার্মান লোককাহিনী ‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা’র কথা উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ওই বাঁশিওয়ালা যেমন বাঁশির সুরে সব ইঁদুর ডেকে নিয়ে ওয়েজার নদীতে ফেলে দিয়েছিল, তেমন কিছু যদি কলকাতায় ঘটত!
[আরও পড়ুন: ‘তালিবান মনে করে আমার শরীরটাও ওদের’, বিস্ফোরক দাবি একমাত্র আফগান পর্ন তারকার]
ঐতিহাসিক টাউন হলে চলতি পুরবোর্ডের দ্বিতীয় মাসিক অধিবেশনে শুক্রবার মধ্য কলকাতার কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে ইঁদুরের তাণ্ডবের তথ্য তুলে ধরে প্রতিকার চান। বলেন, “আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট-সহ গোটা এলাকায় ইঁদুর সমস্ত ফুটপাত ও পিচ রাস্তা ধংস করে দিচ্ছে।” শুধু তাই নয়, ইঁদুরের উৎপাতে উত্তর ও মধ্য কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতার বহু বড় রাস্তা ও মাইলের পর মাইল পেপার ব্লক বসানো ফুটপাতও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বরূপের এই অভিযোগকে সমর্থন করেন বড়বাজার ও বেহালা ও দক্ষিণ কলকাতার অনেক কাউন্সিলর। মুহূর্তে অধিবেশন কক্ষে অন্যান্য কাউন্সিলরদের মধ্যে ইঁদুরের উৎপাত নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বছর কয়েক আগে একবার ঢাকুরিয়া ব্রিজও ইঁদুরের দাপটে বসে যাচ্ছিল। সেই সময় পুরসভা অনেক কৌশলে তা নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে জানান তখন রাস্তা বিভাগের মেয়র পারিষদ থাকা সুশান্ত ঘোষ।
বহু আলোচিত ও বিতর্কিত ইঁদুর নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগের জবাব দিতে ওঠে ডেপুটি মেয়র স্বীকার করেন, প্যারিস থেকে মুম্বই, বিশ্বের অধিকাংশ শহরে ইঁদুরকেন্দ্রিক উৎপাতে দিশেহারা সেখানকার পুরসভা। ২০১২ সালে একবার মুম্বই পুরসভা ইঁদুর ধ্বংস করার অভিযানো নামার ঘোষণা করে। সংবাদপত্রে মুম্বইয়ের মূষিক-দমনের তথ্য জেনে কলকাতা পুরসভা যোগাযোগ করে। কিন্তু তিনমাস পরে ই-মেলে কলকাতা পুরসভাকে মুম্বই জানায়, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিষেধাজ্ঞার জেরে ইঁদুর-নিধন কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘পদ্মভূষণ’ উস্তাদ রাশিদ খানকে সম্বর্ধনা বিজেপির, শুভেচ্ছা জানালেন ভারতী-রুদ্রনীল]
এখানেই শেষ নয়, ২০১৯ সালে প্যারিসে গিয়েও অতীনবাবু স্বয়ং বিশ্বের অন্যতম সুন্দরী শহরে ইঁদুরের দাপট দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে প্রাচীন পদ্ধতি অবলম্বন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে দাবি ডেপুটি মেয়রের। তাঁর পরামর্শ, “রাস্তায় বাড়ির আবর্জনা ও খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা বন্ধ করুন। ময়লা শুধুমাত্র পুরসভার গাড়িতে ফেলুন। আমাদের ঘরের উচ্ছিষ্ট ও খাবারের অংশ খেয়েই ইঁদুররা শুধু বেঁচে থাকছে না, বংশবৃদ্ধিও করছে। এছাড়াও কোথাও মাটিতে ছোট গর্ত ও ইঁদুরের বাসা দেখলেই তা বন্ধ করে দিন। খুব অসুবিধায় পড়লে ‘ইঁদুর মারা কল’ ব্যবহার করুন।” বিষয়টি নিয়ে ১৪৪ জন কাউন্সিলরকেই চিঠি দিচ্ছেন ডেপুটি মেয়র। ওয়ার্ড পিছু পাঁচ হাজার করে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে সচেতনতার লিফলেটও ছাপিয়ে দিচ্ছে পুরসভা।