সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: সেই ২০২০’র ১৯ জানুয়ারি। আই লিগের মঞ্চে যুবভারতীর বড় ম্যাচের রঙ হয়েছিল সবুজ-মেরুন। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। কোভিড (COVID) ধাক্কায় ফিকে হয়েছে ডার্বির স্মৃতি। আইএসএলে পাড়ি জমানো মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সম্মুখসমরে মুখোমুখি হলেও কলকাতা থেকে বহুদূরে গোয়ার মাটিতে সেই ডার্বি যুদ্ধে ছিল না দু’দলের সমর্থকদের প্রাণের উচ্ছ্বাসটুকু। যা সশরীরে ফিরছে বড় ম্যাচে, ‘ডুরান্ডের ডার্বি’তে।
শেষ পাঁচ ডার্বিতে জিতেছে সবুজ-মেরুন। ডার্বি জয়ের ধারাবাহিকতা থাকলেও চলতি মরশুমে ডুরান্ডে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি পালতোলা নৌকার। গোল নষ্টের খেসারত দিয়ে হাতছাড়া হয়েছে পয়েন্ট। ফলে ডুরান্ডে (Durand Cup) টিকে থাকার লড়াইয়ে রবিবাসরীয় ডার্বি কার্যত ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি জুয়ান ফেরান্দোর (Juan Ferrando) দলের কাছে। শনিবার ‘ক্লোজ ডোর’ অনুশীলনে তাই ডার্বি জয়ের ব্লু-প্রিন্ট সাজিয়ে ফেলেছেন স্প্যানিশ কোচ। অনুশীলন শেষে ফেরান্দো বলেন, “যুবভারতীতে মাঠ ভর্তি দর্শক-সমর্থকের সামনে দল খেলবে। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের আবেগ আমি জানি। সেইজন্য ডার্বি জয়কে বাড়তি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ম্যাচটা আমরাই জিতব। প্লেয়ারদের ওপর আমার আস্থা আছে।” সঙ্গে যোগ করেছেন, “আমি কখনও ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করি না। আগে কী হয়েছে বা ক’টা ডার্বি জিতেছি সেটা নিয়ে ভাবতে রাজি নই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে পরের ডার্বি জয় ও তিন পয়েন্ট।”
[আরও পড়ুন: আড়াই বছর পর শহরে ডার্বি, মাঠে ঢুকতে কী কী নিয়ম মানতে হবে সমর্থকদের? ]
প্রতিপক্ষ ইমামি ইস্টবেঙ্গলকেও হালকাভাবে নিচ্ছেন না মোহনবাগান কোচ। ডার্বিতে গোলের রাস্তা খুঁজে পেতে ছোট ছোট গোলপোস্ট নিয়ে গোলমুখে তীক্ষ্ণতার পাঠ দেওয়া হল কাউকো, লিস্টন কোলাসোদের। হল সেট পিস অনুশীলনও। ডার্বি প্রসঙ্গ উঠতেই ফেরান্দোর সাফ কথা, “ডার্বি অন্য ম্যাচ হবে। আমাদের সকলের কাছে স্পেশ্যাল ম্যাচ। ইমামি ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট শক্তিশালী। বেশ ব্যালান্সড। বিদেশিরাও ভাল। ফলে ম্যাচটা হাড্ডাহাড্ডি হবে।” ডার্বির মঞ্চে নিজের সেরাটা দিতে তৈরি কাউকোও। বড় ম্যাচে নামার আগে দলের মাঝমাঠের স্তম্ভের আত্মবিশ্বাসী জবাব, “গোয়ায় যখন ডার্বি খেলেছি তখনই সমর্থকদের থেকে শুভেচ্ছাবার্তায় বুঝতে পেরেছি কলকাতায় এই ম্যাচটা কতটা স্পেশ্যাল। আমাদের যা শক্তি তাতে ডার্বি কেন যে কোনও ম্যাচ জিততে পারি।”
এদিকে, ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন না করেই ডার্বি খেলতে নামবে ইস্টবেঙ্গল। শনিবার দুপুর আড়াইটে থেকে ঘরের মাঠে অনুশীলনের পরিকল্পনা ছিল ইমামি ইস্টবেঙ্গলের হেড কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল সেই পরিকল্পনা। এদিন ফুটবলাররা ক্লাব তাঁবুতে আসার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়। তারমধ্যেই তোয়ালে মাথায় দিয়ে তাঁবুতে ঢুকে যান ফুটবলাররা। যদিও তারপর আর মাঠে নামতে পারেননি তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অনুশীলন না করেই হোটেলের পথে রওনা দেয় গোটা দল। ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলন সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত ডার্বির মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে। এই সেশনেই ফুটবলারদের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করেন কোচ, হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেন যাবতীয় কৌশল। অতীতে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্তের মতো কোচরা ম্যাচের আগের দিনই একদফা পেপ-টক দিতেন ফুটবলারদের। যদিও শনিবার তার কোনওটারই সুযোগ পেলেন না ইমামি ইস্টবেঙ্গলের কোচ স্টিফেন (Stephen Constantine)। বৃষ্টি থামার জন্য তাঁবুতে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেন তিনি। তবে মাঠের দশার কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত অনুশীলনে না নামার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ডার্বির আগের দিন ভেজা মাঠে অনুশীলনের ঝুঁকি নিতে চাননি স্টিফেন। ম্যাচের পরদিন হওয়ায় শুক্রবার ফুটবলারদের বিশ্রাম দিয়েছিল ইমামি ইস্টবেঙ্গল। হোটেলেই রিকভারি সেশন করেন ফুটবলাররা। ফলে এদিনের অনুশীলন পর্বের বাড়তি গুরুত্ব ছিল লাল-হলুদ শিবিরে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে তা ভেস্তে যাওয়ায় কোনও অনুশীলন ছাড়াই সরাসরি রবিবার ডার্বি খেলতে নামবে ইমামি ইস্টবেঙ্গল (Emami East Bengal)।
[আরও পড়ুন: উদ্বোধনী ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ল আয়োজকরা, আফগানিস্তানের কাছে লজ্জার হার শ্রীলঙ্কার]
ডুরান্ড কাপকে প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে দেখার কথা বারবারই শোনা গিয়েছে ইমামি ইস্টবেঙ্গলের হেড কোচ স্টিফেনের মুখে। ডার্বি নিয়েও বাড়তি ভাবনা নেই বলে দাবি করেছিলেন তিনি। এমনকি বৃহস্পতিবার রাজস্থান ইউনাইটেডের সঙ্গে ড্র করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি ডার্বির গুরুত্ব এবং আবেগ নিয়ে ওয়াকিবহাল। তবে আমরা একটা দল তৈরির চেষ্টা করছি। সেখানে ডার্বি একটা ম্যাচ মাত্র। সেই ম্যাচে পাঁচ গোলে জিতলাম না হারলাম, তাতে বিশেষ কিছু তফাৎ হবে না।” ডার্বির মুখে দাঁড়িয়ে অবশ্য ভিন্ন সুর স্টিফেনের গলার। শনিবার তিনি বললেন, “ডার্বি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এই ম্যাচে দলের ফুটবলারদের আরও সুযোগ দেওয়ার সুযোগ পাব। রবিবার আমরা সেরাটা দিয়ে সমর্থকদের খুশি খরতে চাই।” প্রতিপক্ষ মোহনবাগান (Mohun Bagan) নিয়ে স্টিফেনের মূল্যায়ন, “মোহনবাগান ভাল দল। ওদের ভারতীয় স্কোয়াড দারুণ। বিদেশি ফুটবলাররাও ভাল। পাশাপাশি ওদের কোচও দুর্দান্ত কাজ করছেন। ফলে তিন পয়েন্টের জন্য কঠিন লড়াই হবে।” হোটেলে ফিরে সামান্য প্রস্তুতি সারে দল। রাজস্থান ম্যাচে চোট পাওয়া অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, সুহের ভি পি-রা রবিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলার জন্য তৈরি। সূত্রের খবর, দুজনের কারও চোটই গুরুতর ছিল না। ডার্বির কথা মাথায় রেখে তাঁদের মাঠে রাখার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। রবিবার শুরু থেকে খেলতে পারেন দু’জনেই।