shono
Advertisement

Breaking News

ব্যস্ত রাস্তায় চা বিক্রির ফাঁকে আগামী বছরের Madhyamik-এ বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিশোর

টেবিলে বসে বা প্রাইভেট টিউটরের সামনে সবাই যখন পড়ে রাজা তখন চা বানায়।
Posted: 07:19 PM Jul 28, 2021Updated: 07:19 PM Jul 28, 2021

দীপঙ্কর মণ্ডল: কাগজের বাক্সে কিছু মাটির ভাঁড়। কাচের কৌটোতে বিস্কুট। সামনে দড়ির উপর ঝুলছে পানমশলা। উত্তর কলকাতার ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাতে এই চায়ের দোকান। বছর পনেরো ষোলোর কিশোর দোকানদার। আগামী বছর তার Madhyamik পরীক্ষা দেওয়ার কথা। চা বা টোস্ট তৈরির ফাঁকে যেটুকু সময় পড়ে থাকে তাই তার পড়ার সময়। একটু ফাঁকা পেলেই ছেলেটি অঙ্ক কষে। ইতিহাস-ভুগোল বা সিলেবাসের বিজ্ঞান পড়তে শুরু করে।

Advertisement

মাধ্যমিক এবার হয়নি। Corona কাঁটায় আগামী বছরও পরীক্ষা হবে কিনা তা অনিশ্চিত। তবে প্রস্তুতি চলছে। অন্য লাখ লাখ ছেলেমেয়ের মত জীবনের প্রথম মেগা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজা সাউ। অন্যদের সঙ্গে তার ফারাক যেন আসমান-জমিন। নির্দিষ্ট পড়ার টেবিলে বসে বা প্রাইভেট টিউটরের সামনে সবাই যখন পড়ে রাজা তখন চা বানায়। দুধ-চিনি এবং চায়ের পরিমাণ একটু এদিক ওদিক হলেই জোটে গালাগালি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির গেট থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে এগোলে বারাণসী ঘোষ স্ট্রিট। বড় রাস্তার মুখেই এই অস্থায়ী দোকান। বেশ কয়েকটি অফিস আছে এলাকায়। পাশাপাশি আর চায়ের দোকান নেই। সুট-টাই পরা খদ্দের যেমন আছেন, তেমনি চা খেতে আসেন সাধারণ ঠেলাওয়ালাও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রিবাটা যা হয়, তাতে দু’বেলা চালেডালে পেট ভরে যায় রাজার বাড়ির লোকেদের।

[আরও পড়ুন: Covid-19: টিকাকরণে গাফিলতি বরদাস্ত নয়, কড়া নির্দেশিকা জারি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের]

দোকানটি আসলে কার্তিক সাউয়ের। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গিয়েছেন। মৃত কার্তিকের দুই ছেলে রোহিত এবং রাজা। এই দু’জনে এখন দোকান চালায়। মা বীণাদেবী এবং বোনকে নিয়ে চারজনের সংসার। দারিদ্রের কারণে রোহিত এখন স্কুলছুট। বোন টুম্পা ও রাজা হাল ছাড়েনি। চা বেচে যা আয় হয় তা থেকে সংসার চালিয়ে উদ্বৃত্ব আর থাকে না। তবু অদম্য জেদ ও ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে পড়াশোনা ছাড়েনি ভাইবোন। চেয়েচিন্তে পুরনো বই জোগাড় হয়েছে। খাতাপেনও সেইভাবে জোগাড় হয়। আর তা সম্বল করেই চলে সরস্বতীর আরাধনা।

[আরও পড়ুন: Covid-19: শিশুদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত স্বাস্থ্য দপ্তরের]

বর্ষাকাল। বৃষ্টির ছাঁট আসে। বারবার উনুন জ্বালাতে হয়। মাথার উপর থেকে প্লাস্টিকের চাদর সরে যায়। খদ্দেরদের নানারকম বাঁকা কথা। সব উপেক্ষা করে একচিলতে দোকানের বেঞ্চে বসে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেয় রাজা। অভাব এই পরিবারের মুখ থেকে হাসি কাড়তে পারেনি। রাস্তার পাশেই রান্না হয়। দিব্বি সবাই খেয়েও নেয়। দোকানদারি শেষ করে সবাই পৌঁছায় একচিলতে গিরিশ পার্কের কাছে একটি সিঁড়ি ঘরে। অনেক কসরৎ করে এই মাথার ছাদটুকু জুটেছে। গাড়ির আওয়াজ আর দোকানদারির মধ্যে আদৌ পড়া সম্ভব? প্রশ্নে রাজা জানায়, “এভাবেই আমার দিদি পড়াশোনা করে কলেজ পর্যন্ত গিয়েছে। আগে আমরা এই রাস্তাতেই থাকতাম। এখন একটি বাড়ির সিঁড়িঘরে সবাই থাকি। কতজনের তো এটুকুও থাকেনা।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement