ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ‘ফাইট কোনি! ফাইট।’ ‘কোনি’ ছবির ক্ষিদ্দা’র সেই ডায়লগ এখনও আমবাঙালির ভোকাল টনিক। তবে রিয়েল লাইফে ক্ষিদ্দা কোনি(রোগী)-কে বলেছিলেন, “তুইও বাঁচবি। মিরাকেল করবি। দেখে নিস।” ওই তরুণী ভুগছিলেন ‘অল সাইকোজেনিক পারফুরা’ (Psychogenic purpura) নামে একটি বিশেষ ধরনের সমস্যায়। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল শারীরিক উপসর্গের উপর ভিত্তি করে। এমনকী বিরল জিনঘটিত রক্তরোগ ফ্যাক্টর এইট ‘ভন উইলভ্যান ফ্যাক্টর ডিজিজ’ আক্রান্ত রোগিণী হিসাবেও তাঁকে সাব্যস্ত করেন কলকাতার প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। টানা তিনবছর এমন চিকিৎসার পর শেষপর্যন্ত জিতল রিয়েল লাইফের ‘কোনি’ এখন সে দিব্য সুস্থ। ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে বাড়ি থেকে অফিস।
বাস্তবের ‘ক্ষিদ্দা’ ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি-র মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রদীপ সাহা। মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং পিজি হাসপাতাল ঘুরে রিয়েল লাইফের কোনি যখন তাঁর কাছে এলেন তখন কার্যত চলচ্ছক্তিরহিত। কিন্তু বেঁচে থাকার তীব্র আকুতি। ২০১৫ সালে বাড়ি ফেরার সময় অটোরিকশায় দুর্ঘটনা হয় বসিরহাটের বছর পঁচিশের তরুণীর। মাথায় রক্ত জমাট বাঁধে। দিন পনেরো চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠে।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারীর কার্যালয়ে হামলা! মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব রাজ্যপালের, পালটা দিল তৃণমূল]
কিন্তু দু’বছর পর হঠাৎ অফিসে নাক, কান চোখ, মুখ দিয়ে রক্তপাত শুরু। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর মাঝমধ্যেই রক্তপাত। কখনও রক্তবমি। এমনকী প্রস্রাবের সময়ও রক্তপাত। প্রথমে সাগর দত্ত। পরে মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগ। অন্তত ৪১ ধরনের রক্ত পরীক্ষা হয়। তরুণীর কথায়, “ছোটবেলায় অ্যাথলিট ছিলাম। কিন্তু রক্তপাতের সময় কেমন অসহায় লাগত। বাবা-মাও অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকতেন। ৪২ ধরনের রক্তপরীক্ষা হয়। শেষ পরীক্ষায় জানা গেল, বিরলতম জিনঘটিত রোগ ‘ফ্যাক্টর এইট ডেফিসিয়েন্সি ভন উইলভ্যান ফ্যাক্টর ডিজিজ’-এ আক্রান্ত আমি। প্লাজমা না পেলে বাঁচব না।” তরুণীর কথায়, “আমাদের তিনি প্রশ্ন করেন, কেন দ্বিতীয়বার রক্তপরীক্ষা হয়নি?” ফের ফ্যাক্টর এইট পরীক্ষা। এবার দেখা গেল আগের রিপোর্টটাই ভুল। একরকম বীতশ্রদ্ধ হয়ে পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে আউটডোর এবং সেখানেই ভরতি হলেন বাস্তবের ‘কোনি’। কয়েকদিন পর ঠিক হয় তাঁকে ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
ওই তরুণীর কথায়, ঠডাক্তারদের বারবার বলি, আপনারা তো দেখছেন চোখ, নাক, মুখ দিয়ে আর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছে। রক্তপাত কমাতে ইঞ্জেকশনও দিচ্ছেন। তাহলে কেন মানসিক বিশেষজ্ঞের কাছে?” এরপরের ঘটনা সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানায়। ডা. প্রদীপ সাহার কথায়, “মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেই বুঝলাম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। প্রায় দেড় মাস ভরতি ছিল মেয়েটি। ওই সময়ে একটি ভিটামিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হত। আর ঘুমের ওষুধ।” দেড়মাস পর তরুণীকে ছুটি দেওয়া হল। পঁচিশ দিন পর ক্রমশ রক্তপাত বন্ধ হল। এমন হয়েছে, আউটডোরে দেরি হওয়ায় টিকিট করা যায়নি। কিন্তু ছুটে প্রদীপবাবুর ঘরে ঢুকে পড়েছেন তরুণী। কাউন্সেলিং করে ইঞ্জেকশন নিয়ে ফিরে গেছেন। তরুণীর কথায়, “সবার কথাই মনে আছে। কিন্তু ওষুধের সঙ্গে চাই বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছে। সেটাই উসকে দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু।”