অভিরূপ দাস: বা হাতের কব্জির তলায় মাংস বেরিয়ে পরেছে। একঝলক দেখলে মনে হবে বাঘের কামড়! ছিন্নভিন্ন শিরা, উপশিরা, ধমনী। ঝর্ণার স্রোতের মতো রক্ত ঝড়ছে সেখান থেকে। এমন সে ভয়ঙ্কর দৃশ্য হার মানাবে কোনও হলিউডের সিনেমাকেও। সম্প্রতি তেমনই দৃশ্যের সাক্ষী হল ঢাকুরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগ।
পঞ্চাশ বছরের মনোজিৎ কর (৫০) কাজ করছিলেন বাড়ির বাগানে। স্ত্রী অনিন্দিতা কর জানিয়েছেন, আচমকাই চিৎকার শুনে দৌড়ে যাই। স্ত্রীর কথায়, একটা ইলেকট্রিক করাত ছিল বাগানে। অসাবধান বশত সেটা বাহাতের উপর বসিয়ে ‘অন’ করে দিয়েছিলেন মনোজিৎবাবু। মুহূর্তে বাইবাই বেগে ঘুরতে শুরু করে ইলেকট্রিক করাত। কাটাওয়ালা ধাতব দাঁতের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হাত। হলিউডের ‘টেক্সাস চেইন শ’ সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। বাস্তবেও যে তা হয় তার প্রমাণ দিলেন মনোজিৎ।
[আরও পড়ুন: ১০০ দিনের কাজ পরিদর্শনে রাজ্যে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল, ১৫টি জেলায় চলবে নজরদারি ]
ঘটনার পর আর দেরি করেননি আহতর স্ত্রী। যাদবপুরে প্রিন্স গুলাম হুসেন শাহ রোড থেকে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল, কুড়ি মিনিটের রাস্তা আসতে গিয়ে প্রায় ছ’বোতল রক্ত বেরিয়ে যায় আহতর শরীর থেকে। বারোঘন্টা ভেন্টিলেশনে ছিলেন আহত ব্যক্তি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীকে যখন নিয়ে আসা হয় হাত সম্পূর্ণ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকশন সার্জন ডা. অনির্বাণ ঘোষ জানিয়েছেন, কাটা হাতও জোড়া লাগানো সম্ভব। কিন্তু ভয়টা হল রক্তক্ষরণ নিয়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারত। কতটা রক্তক্ষরণ মারাত্মক? সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্কর শরীরে ৪ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। আড়াই থেকে ৪ লিটার রক্ত বেরিয়ে গেলেও কারও মৃত্যু হতে পারে।
পাঁচ ঘন্টার অস্ত্রোপচার হয় মনোজিৎবাবুর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর হাতের আর্টারি, টেন্ডন, শিরা, ধমনী, পেশি সমস্ত কেটে গিয়েছিল। সেগুলোকে নতুন করে পুর্নস্থাপন করা হয়েছে। পায়ের থেকে শিরা এনে মেরামত করা হয় হাতের ক্ষত। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকশন সার্জন ডা. অনির্বাণ ঘোষ। অস্ত্রোপচার চলাকালীন প্রায় ৪ বোতল রক্ত দিতে হয়েছে রোগীকে।