অভিরূপ দাস: বয়সের চাপে হরমোনের হেরফের। আখরোট হয়ে গেল মুসাম্বি! তিরাশি বছরের বৃদ্ধের প্রস্টেট গ্রন্থি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল, যে টানা কয়েক মাস বন্ধ ছিল প্রস্রাব। অগুনতি ওষুধ দিয়েও কাজ হয়নি। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়া। উপশম দিতে প্রথমে ক্যাথিটার। তারপর অস্ত্রোপচার। দক্ষিণ শহরতলীর ফর্টিস হাসপাতালে শিব নারায়ণ দাসের ‘এনলার্জড’ প্রস্টেট গ্রন্থি দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, এটাই পূর্ব ভারতের বৃহত্তম।
এমনিতে প্রস্টেটের সাইজ আখরোটের মতো। ওজন বড়জোর ৭ থেকে ১৬ গ্রামের মধ্যে। একটু বড় হলেও তা কত হতে পারে? ৪০/৫০? তিলোত্তমায় ৮৩ বছরের বৃদ্ধে শিব নারায়ণ দাসের প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ওজন দাঁড়িয়েছিল ২৭০ গ্রামে। পূর্ব ভারতে এখনও পর্যন্ত অস্ত্রোপচার হওয়া সর্ববৃহৎ প্রস্টেট গ্ল্যান্ড এটাই।
[আরও পড়ুন: Weather Update: রবিবার থেকে কলকাতায় কমবে শীতের আমেজ! সোমবার একাধিক জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস]
বয়সকালে প্রস্টেট গ্রন্থীর সমস্যা গা সওয়া। কেউ প্রস্রাব চেপে রাখতে পারেন না। কারও প্রস্রাবের গতি কমে যায়। এমন সময় উদাসীন থাকতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা। ইউরোলজিস্ট ডা. শ্রীনিবাস নারায়ণের কথায়, বয়সকালে যেমন চুল পাকে, তেমন প্রস্টেট গ্রন্থিও বাড়ে। তাঁর পরামর্শ, পঞ্চাশ পেরলেই বছরে একবার আল্ট্রা সাউন্ড করান। দেখে নিন প্রস্টেট ঠিক আছে কি না। নয়তো শেষমেশ প্রৌঢ় শিব নারায়ণ দাসের মতোই হাল হবে। জামসেদপুরের শিব নারায়ণবাবুর প্রস্রাবের সমস্যা কয়েক মাস ধরে। নিরাময় না পেয়ে কলকাতায় আসেন। হলমিয়াম লেসার প্রস্টেট সার্জারি পদ্ধতিতে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। একদিকে কার্ডিওমায়োপ্যাথি অন্যদিকে সিওপিডি। অশীতিপর শিব নারায়ণকে চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরা। কোনওরকম রক্তক্ষরণ ছাড়াই এই অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার করা হল তাঁর।
রাজ্যে পঞ্চাশ পেরনো তিনজনের মধ্যে একজন ভুগছে প্রস্টেটের সমস্যায়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, পঞ্চাশ পেরনো পুরুষদের শরীরে হরমোনাল ভারসাম্যের সমস্যার জন্য প্রস্টেট গ্ল্যান্ড আকারে বড় হয়ে যায়। প্রস্টেট গ্রন্থি এতই বড় হয়ে যায় যে, প্রস্রাবথলি থেকে প্রস্রাব নির্গমনের রাস্তার উপরে চাপ পড়ে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। প্রস্টেট বাড়লে কেন মূত্রত্যাগে সমস্যা? প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের কোষ বাড়তে শুরু করায় ইউরেথ্রার উপর চাপ পড়ে। মূত্র ব্লাডারের পেশী ক্রমশ মজবুত ও অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে আগের মতো মূত্র আর ব্লাডারে জমতে পারে না। বদলে যায় শরীরের মেকানিজমও। সামান্য প্রস্রাব জমলেই ওভার অ্যাকটিভ ব্লাডার, তা দ্রুত বের করে দিতে চায়। তার ফলেই ঘনঘন প্রস্রাব পায়। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা থেকে ক্যানসারও হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, মূত্র নিঃসরণে কোনও সমস্যা হলে পিএসএ বা প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট করে নেওয়া উচিত।