অভিরূপ দাস: পেট ভার ভার। চলতে ফিরতে অসুবিধা। ঋতুস্রাবের সময় রক্তপাত হত একটু বেশি। গা করেননি অন্তরা ভুঁইয়া। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা বছর চল্লিশের মহিলার টনক নড়ল যখন, রক্তপাত তখন ঝরনার বেগে। ভয়াবহ রক্তপাতে দুর্বল হয়ে পড়ছিল শরীর। সেই ঝরনায় বেড়ি পরাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগ। যে অস্ত্রোপচারে উত্তর কলকাতার বাসিন্দা ওই মহিলা নতুন জীবন পেলেন তার নাম, ‘টোটাল অ্যাবডোমিনাল হিসটেকটমি উইথ বাইল্যাটারাল সালফিংগোউফরেকটমি।’ মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. প্রিয়াঙ্কা স্যানালের কথায়, শুধু নাম নয়। অস্ত্রোপচারও যথেষ্ট জটিল। গোটা অস্ত্রোপচারে দু’ইউনিট রক্ত দিতে হয়েছে অন্তরাকে।
এক সন্তানের মা অন্তরার অস্ত্রোপচার করে দেখা গিয়েছে আসল ‘ভিলেন’ পেল্লায় এক মাংসপিণ্ড। জরায়ুর পুরোটাই যে দখল করে নিয়েছিল। যে কারণে ঋতুস্রাবে রক্তের ফোয়ারা। পেটটা ভারী হয়ে থাকত সবসময়।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরায়ু বা ইউটেরাসে ছোটখাটো টিউমার হলে তাকে ফাইব্রয়েডস বলে। এই ধরনের টিউমার সাধারণত ক্যানসারযুক্ত হয় না। তবে মন্থরগতিতে বড় হতে থাকে। ফার্টাইল এজ বা সন্তান উৎপাদনক্ষম বয়স অথবা ৩০ বা ৩৫ বছর বয়সের মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েডস-এর সমস্যা ধরা পড়তে পারে। অবশ্য এর বেশি বয়সেও ফাইব্রয়েডস-এর সমস্যা নজরে আসে। প্রতি ৫ জন মহিলার মধ্যে ১ জন এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত।
[আরও পড়ুন: গরুপাচারের টাকা কোথায়? লেনদেনের হদিশ জানতে আসানসোল জেলে অনুব্রতকে জেরা ED’র
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অন্তরা ভর্তি হওয়ার পর তাঁর পেটটা উঁচু হয়ে ছিল। সাধারণত চব্বিশ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সিতে যেমনটা থাকে। ইউএসজি করা হয় রোগীর। দেখা যায়, বিশাল একটা মাংসপিণ্ড ঘাপটি মেরে আছে জরায়ুতে। বাড়তে বাড়তে দখল করে নিয়েছে পেটের অনেকটা অংশ। জটিল অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সুদীপকুমার সাহা, স্ত্রীরোগ বিভাগের ডা. প্রিয়াঙ্কা সান্যাল। এছাড়াও সাহায্য করেছেন ডা. সাবর্ণ দাস, ডা. অর্পিতা সাহা। প্রায় দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর রোগী সুস্থ হয়েছেন।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতুস্রাবে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে ঢিলেমি দেবেন না। কারণ ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডসের জরায়ুর গাত্রে চাপ দেয়। ফলে মেনস্ট্রুয়েশনের সময় স্বাভাবিকের চাইতেও বেশি রক্তপাত হয়। ইউটেরাস স্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হতেও পারে না। ফলে ব্লিডিং বন্ধ করতে পারে না। সঠিক সময়ে ফাইব্রয়েডসের চিকিৎসা না হলে তা রক্তাল্পতা এমনকী, ইনফার্টিলিটিও ডেকে আনতে পারে।