কৃষ্ণকুমার দাস: একে কি বলবেন, লকডাউনের সুফল? কলকাতায় বসে অতিমারীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় দশ লক্ষ মহিলাকে অনলাইনে শিল্পোদ্যোগী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিলেন এক বাঙালি শিল্প-পরামর্শদাতা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই দশ লক্ষের মধ্যে চার লক্ষ নারী প্রশিক্ষণের পর উদ্যোগপতি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বেশ কয়েকজন আবার কুয়েত ও ওমানের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশে বাংলাদেশি সামগ্রী রপ্তানি করে মুনাফা এনেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের অনুমতিক্রমে বাংলাদেশের ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস’ ফোরামের উপদেষ্টা কলকাতার ওই বিশেষজ্ঞ হলেন লন্ডনের ‘সিল্কক গ্লোবাল’
সংস্থার প্রেসিডেন্ট ও সিইও সৌম্য বসু। কিন্তু কীভাবে পৌঁছে গেলেন তাঁর বিশ্বখ্যাত এন্টারপ্রেনারশিপ মাস্টার্সক্লাস’ নিয়ে পদ্মাপারের গ্রামে-গঞ্জে? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই সৌম্য জানান, “ফিকির সুপারিশে যশোরে একটি হাইটেক পার্কের উদ্বোধন বক্তব্য দিয়ে শুরু, পরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সরকারের হয়ে সেখানের শিল্পসম্ভাবনার কথা তুলে ধরি। সেখানেই হাসিনা সরকারের তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে কাজ শুরু করেছি।”
[আরও পড়ুন: করোনায় কাঁপছে বাংলাদেশ, লকডাউন বলবৎ করতে রাস্তায় টহল সেনার]
২০২০ সালের মে মাসে যখন ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস’ (উই) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নারী উদ্যোগপতি গড়ার ‘মাস্টারক্লাস’ শুরু হয় তখন সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ হাজার। একবছরেই তা বৃদ্ধি পেয়ে ১২ লক্ষ। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসা শুরুর প্রশিক্ষণ ক্লাসে আমন্ত্রিত বক্তা হিসাবে এসেছেন বাংলাদেশ সংসদের স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরি, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি ছাড়াও ইংল্যান্ড ও আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্পোরেট সংস্থার প্রধানরা। যেহেতু ফিকির মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু তাই সৌম্যর এমন আন্তর্জাতিক সাফল্যে গর্বিত কলকাতার শিল্পমহলও।
‘মাস্টারক্লাস’ ক্লাসের সিজন-১ এর সমাপ্তিতে সৌম্যর শিক্ষন পদ্ধতি ও সিলেবাসকে স্বীকৃতি দিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ডঃ এ কে আবদুল মোমেন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, ঢাকার নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম প্রমুখ। উই-এর সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা জানিয়েছেন, “আগামী জুলাই মাস থেকে দ্বিতীয় ধাপে প্রশিক্ষণ দিতে সিজন-২ শুরু হচ্ছে।” সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি আশ্বস্ত করেছেন, “নারীদের স্বনির্ভরতার পথে আরও এগিয়ে দিতে এন্টারপ্রেনারশিপ মাস্টার্সক্লাসকে ডিপ্লোমা কোর্সের রূপ দিতে সরকারের তরফে সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ঢাকা বিস্ফোরণে জঙ্গিযোগ! রহস্যভেদে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন]
করোনাকালে ঘরে বসে স্রেফ একটা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে মাস্টার্স ক্লাসের সাফল্যে উজ্জ্বীবিত হয়ে বিদেশমন্ত্রী স্বয়ং নারী উদ্যোগপতিদের সমস্ত সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন। আর স্বয়ং সৌম্য বুধবার লেকগার্ডেন্সের বাড়িতে বসে জানান,“বিদেশে শিখে আসা বিনিয়োগের নানা কলাকৌশল ও প্রস্তাবনা যে বাঙালি মা-বোনেদের বাণিজ্যিক পথে এগোনোর কাজে সাহায়্য করতে পেরেছি এটাই বড় পাওনা।” বস্তুত এই কারণে ২০১৯ সালে লন্ডনের বিশ্বখ্যাত বাণিজ্য ম্যাগাজিনের তরফে ‘গ্লোবাল সিইও’ সম্মান পেয়েছেন কলকাতার এই বিশেষজ্ঞ। অবশ্য ওপার বাংলার দশ লক্ষ বাঙালি নারীকে তিনি যে উদ্যোগপতি হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তা আরও উন্নতধারায় পশ্চিমবঙ্গেও ছড়িয়ে দেওয়ার মনবাসনা রয়েছেন সৌম্য বসুর।