অর্ণব আইচ: টেলিগ্রাম অ্যাপ (Telegram App) প্রতারণায় বাড়ছে বিপদ। ভিনরাজ্য ও বিদেশি প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে বিপুল টাকা খোয়াচ্ছেন শহরবাসী। সম্প্রতি পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটার (Beleghata) এক বাসিন্দা প্রতারকদের জালে পা দিয়ে খুইয়েছেন প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা।
প্রতারিত হওয়ার পর ক্যানসার (Cancer) আক্রান্ত ওই ব্যক্তি প্রথমে বেলেঘাটা থানা ও পরে লালবাজারের সাইবার থানায় (Cyber Crime) অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে যে, কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার লোভে যাঁরা টাকা লগ্নি করছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রথমে ভিন রাজ্যের ভাড়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তথা মিউল অ্যাকাউন্টে পৌঁছচ্ছে সেই টাকা। সেখান থেকে ওই টাকা যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিদেশে পাচার হচ্ছে, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত। এর আগেও এই টেলিগ্রাম অ্যাপ প্রতারণায় পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন বহু শহরবাসী। টেলিগ্রামের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করা হয়। আরও কতজন, তাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন, সেই তদন্ত করছে পুলিশ। একই সঙ্গে প্রচারের মাধ্যমে লালবাজারের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে শহরবাসীকে।
[আরও পড়ুন: ফের CAA অস্ত্রে শান! লোকসভার আগেই লাগু হবে নাগরিকত্ব আইন, বড় ঘোষণা শাহর]
পুলিশ জানিয়েছে, সিএসটিসির (CSTC) আধিকারিক প্রদীপ সরকার বেলেঘাটার ইস্ট কুলিয়া রোডের বাসিন্দা। তিনি এবং তাঁর ছেলে দুজনেই ক্যানসার আক্রান্ত। গত ১৬ ডিসেম্বর অনলাইনে স্টক ট্রেডিং শেখার জন্য ফেসবুক লিংক পান। ঘরে বসে বিনামূল্যে স্টক ট্রেডিং ও পোর্টফোলিও রিভিউয়ের সুযোগ মেলায় তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পর তাঁকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) গ্রুপে যোগদান করানো হয়। সেখানেও কিছুদিন স্টক ট্রেডিং শেখানো হয়। অনলাইনে প্রশিক্ষণ তাঁর বেশ ভালো লাগছিল। অনলাইনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিজ নিজ ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রেডিং প্র্যাকটিসও করানো হচ্ছিল। সেখানে থেকে মুনাফাও আসতে শুরু করে।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এর পর আসল ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছিল, যা ঘুণাক্ষরে টের পাননি ওই ব্যক্তি। ওই গ্রুপের অ্যাডমিন থেকে টেলিগ্রামে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বলা হয়, সেখানে অনেকেই ট্রেডিং করে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। একসঙ্গে শেয়ার বিক্রি করার সুযোগ থাকায় মুনাফাও বেশি মেলে। প্রদীপবাবু জানান, টেলিগ্রামে যোগ দেওয়ার পর থার্ড পার্টির মাধ্যমে আমার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা জমা করতে থাকেন। জোকসা অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা হতে থাকে।
[আরও পড়ুন: চাকুরিজীবীদের জন্য বড় ঘোষণা, ইপিএফে বাড়ল সুদের হার]
১৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা জোকসার অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করা হয়। মুনাফা-সহ প্রায় এক কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে জানানো হয়। এর পরও বাড়তি টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। নিজের বিনিয়োগের টাকা তুলতে চান তিনি। তখন পাল্টা ১৪ লক্ষ টাকা চাওয়া হয় অ্যাডমিন সদস্যদের পক্ষ থেকে। বলা হয়, জোকসা অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিতে হবে। তার জন্য ১৪ লক্ষ টাকা আগে ট্যাক্স দিতে হবে। ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্সের শংসাপত্র নিয়ে তবেই টাকা তোলা যাবে। নাহলে জোকসার ওই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁর পক্ষে আর টাকা দেওয়া সম্ভবপর ছিল না। ওই অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা থেকে ট্যাক্স কেটে বাকি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন অভিযোগকারী। কিন্তু প্রতারকরা তাতে রাজি হয়নি। তখনই বুঝতে পারেন বড় প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে গিয়েছেন।