অভিরূপ দাস: পিঠে গেঁথে রয়েছে ইস্পাতের ফলা। গলগল করে বেরেচ্ছে রক্ত। সেই অবস্থাতেই গড়িয়া থেকে ঢাকুরিয়া (Dhakuria), সাড়ে আট কিলোমিটার রাস্তা ছুটে এসেছিলেন ইন্দ্রজিৎ খাঁড়া (নাম পরিবর্তিত)। ক্ষতস্থান ছিল ছিন্নভিন্ন। জখম ব্যক্তির রক্তচাপ ওঠানামা করছিল। আঘাত ছিল পাঁজরের হাড়েও। কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনলেন ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গত বুধবারের ঘটনা। রাত তখন প্রায় ১০টা। আচমকাই এমার্জেন্সির সামনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তিকে দেখে চমকে যান ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের কর্মচারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির ডান দিকের কাঁধে চেপে বসেছিল চাকু। এতটাই গভীরে ঢুকেছিল যে স্রেফ হাতলটুকু দেখা যাচ্ছিল!
[আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে দুর্ঘটনাই, মমতার উপর হামলার প্রমাণ নেই! কমিশনে ‘রিপোর্ট’ পর্যবেক্ষকদের]
এত রাতে? এই অবস্থায়? জিজ্ঞাসা করতেই জখম ব্যক্তি জানান, দুর্ঘটনা হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের ঘটনা পুলিশ কেসের আওতায় পড়ে। তবে ওই ব্যক্তির যা অবস্থা ছিল তাতে জিজ্ঞাসাবাদে দেরি হলে তাঁর প্রাণ বিপন্ন হতে পারত। তাই, পুলিশকে জানিয়েই তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। আমরি হাসপাতালের কার্ডিও থোরাসিক ভাসকুলার সার্জারির বিভাগীয় প্রধান ডা. কৌশিক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, এমন বহু ‘কেস’ সরকারি হাসপাতালে দেখা যায়। কিন্তু পিঠে ছুরি নিয়ে সরাসরি বেসরকারি হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে হাজির হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল।
ডা. কৌশিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রথমে জখম ওই ব্যক্তির সিটি স্ক্যান করে দেখে নেওয়া হয়। অপারেশন টেবিলেই ছুরিটা বের করা হয়। ছুরি যেখানে ঢুকেছে তার চারপাশের সফট টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই জায়গার শুশ্রূষা করা হয়েছে। হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট বিশেষজ্ঞ ডা. সোহম মজুমদার জানিয়েছেন, ছুরি ঢুকে পাঁজরের একটি হাড় জখম করে। ৪০ মিনিটের জটিল অস্ত্রোপচার শেষে ওই ব্যক্তি ভাল আছেন। শনিবার তাঁকে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডা. মজুমদারের কথায়, ওই ব্যক্তি যখন হাসপাতালে আসেন তখন তাঁর রক্তচাপ পৌঁছে গিয়েছিল ২০০/১৪০ এ। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসের মতো একাধিক কো-মর্বিডিটি ছিল ওই ব্যক্তির। ফলে শরীর থেকে ছুরি বের করার অস্ত্রোপচার খুব সহজ ছিল না। পিঠে ছুরি নিয়ে গড়িয়া থেকে ঢাকুরিয়া আসতেই অনেকটা সময় লেগেছিল। সে সময় প্রচুর রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল শরীরে থেকে।
কার্যত মৃত্যুকে পরাস্ত করে জখম ব্যক্তিকে নতুন জীবন দিয়েছেন আমরির চিকিৎসকরা। তাঁরা বলছেন, কপাল ভাল ছুরি ফুসফুসে আঘাত করেনি। একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন ইন্দ্রজিৎবাবু।