সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ওষুধের দোকানে ভয়াবহ আগুন। আগুনের গ্রাসে হাসপাতালের একাংশ। ধোঁয়ায় ঢেকেছে গোটা চত্বর। হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রোগীদের উদ্ধার করে আনছেন স্থানীয়রা। সেইকাজে হাত লাগিয়েছেন রোগীর আত্মীয়রাও। এমনই একজন রোগী হুগলির বাসিন্দা অমল রায়। আগুন আতঙ্ক থেকে বাঁচতে দাদার কোলে চেপে ওয়ার্ডের বাইরে এসেছেন তিনি। দমবন্ধ করা ধোঁয়ায় তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস আটকে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা অন্যত্র ভরতির পরামর্শ দিয়েছেন। এই অবস্থায় কোথায় যাবেন, তিনি জানেন না। অমলবাবু নিজেই সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তের কথা শোনালেন।
গলার ভিতরে অসহনীয় জ্বালা। এভাবে কী ঘুম আসে! কাতরেছি। রাতভর! বাপরে-মারে করে গোঙাতে গোঙাতে কখনও বুঝি চোখ দু’টো বুজে এসেছিল। আধো চোখে হঠাৎ দেখি দাদা আমায় পাঁজাকোলা করে তুলছে। কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই দাদা বলল, ‘আমাকে জাপটে ধর, আগুন লেগেছে। তাড়াতাড়ি পালাতে হবে।’ শুধু দাদা নয়, আমার পাশের বেডে থাকা বয়স্ক মানুষটাকে দেখলাম চাদরে ঝুলিয়ে নিচে নামাচ্ছে কয়েকজন। উনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। দাদার কোলে নিচে নামার সময়ই দেখলাম চারিদিকে সাদা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। ধোঁয়ার তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে অনেককেই দেখলাম অসুস্থ হয়ে পড়তে। বাদ গেলাম না আমিও। ধোঁয়ায় গা গুলিয়ে বমি শুরু হল আমার। জলের বোতলের মধ্যে রাখা অ্যাসিডকে জল ভেবে খেয়ে ফেলেছিলাম সোমবার। চন্দননগরে কোনও হাসপাতাল ভরতি নেয়নি। এরপর দাদা আমায় এই মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এসে ভর্তি করল। তারপর থেকে দু’দিন কেটে গিয়েছে। খাওয়া তো দূরের কথা, ভাল করে ঢোক গিলতেও পারছি না। কাল পর্যন্ত তো স্যালাইন চলেছে। কথা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। গলার ভিতরের অংশগুলো যেন দলা পাকিয়ে গিয়েছে। বুকে-পেটেও অসহ্য জ্বালা। তারমধ্যেই ধোঁয়ার গন্ধে বমি। শরীরটা যেন একেবারে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু কে দেখবে! ডাক্তারই তো নেই। চারিদিকে শুধু ছোটাছুটি। আমার থেকেও খারাপ অবস্থা হয়েছে বাকি রোগীদের।
[মেডিক্যালে আগুন: অব্যবস্থায় ক্ষোভ রোগীর পরিজনদের, একমাসের ওষুধ নষ্টের আশঙ্কা]
পুলিশর পোস্টের কাছে একটা ফাঁকা জায়গায় দাদা এসে আমায় শুইয়ে দিল। তখনও বাতাসে শুধুই ধোঁয়া। তখন আবার আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন ওয়ার্ড বয় এসে আমাকে একটা ওয়ার্ডে নিয়ে গেল। আমার অবস্থা দেখে কিছুক্ষণ অক্সিজেন দিল। তারপর ডাক্তার এসে স্লিপে একটা নম্বর লিখে দিয়ে দাদাকে বললেন, আমাকে অন্য কোথাও ভরতি করে দিতে। দাদার মাথায় তখন কার্যতই আকাশ ভেঙে পড়েছে। কোনও প্রেসক্রিপশন নেই। নেই কোনও ভরতি হওয়ার নথি। এই দু’দিন আমার কী চিকিৎসা হয়েছে, তারও কোনও কাগজ নেই। কী করেই বা থাকবে! আমি এখন শুধুই একটা নম্বর! ওই পরিস্থিতিতে আমাকে পাঁজাকোলা করে নিচে নামানোর সময় দাদা তো ওগুলো ওখানেই ফেলে এসেছে। আমার বেডের গায়েই তো ওগুলো ঝুলছিল। এখন সেগুলো পাওয়ার আর তো কোনও রাস্তা নেই। কী করব, কোথায় যাব, ভেবে উঠতে পারছে না দাদা। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অন্য কোথাও ভরতি হতে পারব কি না, এই আশঙ্কা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়তে
হচ্ছে। আমি তো এখনও সুস্থ নই। গলার ভেতরটা কেউ যেন ক্রমশ আঘাত করে চলেছে। রক্তাক্ত হচ্ছি বারবার। তারপর ধোঁয়ার জেরে বমি করে আমার শরীরের অবস্থাও ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। যেন ঝিমিয়ে পড়ছি। একটু শুতে পারলে ভাল হতো। বা কিছুক্ষণ ঘুমোলে শরীরের অস্থিরতাটা কাটত। উপায় নেই। নতুন কোনও হাসপাতালের খোঁজে। এসেছিলাম এখানে সুস্থ হতে, ফিরছি শুধুমাত্র একটা নম্বর হয়ে।
[মেডিক্যাল কলেজে বিধ্বংসী আগুন, হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক আতঙ্ক]
The post ‘বেড ছেড়ে জাপটে ধর, প্রাণে বাঁচতে এক্ষুনি পালাই’ appeared first on Sangbad Pratidin.