নব্যেন্দু হাজরা: বিপত্তি যেন পিছু ছাড়ছে না কলকাতা মেট্রোয় (Kolkata Metro)। বছরের প্রথম দিনও তার ব্যতিক্রম হল না। তবে পয়লা জানুয়ারির দুর্ভোগ যেন অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেল। সকাল সাতটা থেকে প্রায় প্রায় চার ঘণ্টা মেট্রোর কোনও স্টেশন থেকে ইস্যু হল না টোকেন (Token)। যার ফলে স্টেশনে এসে টোকেন না পেয়ে ফিরে গেলেন হাজার হাজার মানুষ। যখন চালু হল, তখনও প্রত্যেকটি স্টেশনে ছিল থিকথিকে ভিড়। টোকেন পাওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি। এই বিশৃঙ্খলা চলল প্রায় বেলা ১২টা পর্যন্ত।
কল্পতরু উৎসব (Kalpataru Festival) উপলক্ষে এদিন দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, কাশীপুর উদ্যানবাটিতে প্রচুর জনসমাগম হয়। বেশিরভাগই মানুষই দ্রুত এখানে যাওয়ার জন্য পাতালপথকে বেছে নেন প্রতিবছর। কিন্তু এদিন পাতালপথে নেমে আসা এই আচমকা বিপত্তিতে বছরের প্রথম দিনটিতে তাঁদের হয়রানির একশা হতে হল। মেট্রোপথের দৌলতে পয়লা জানুয়ারির প্ল্যানিং চৌপাট হল অগণিত মানুষের। পরিস্থিতি একটা সময়ে এমন হয় যে, একাধিক স্টেশনে রীতিমতো ক্ষোভ দেখাতে থাকেন যাত্রীরা। মেট্রোর সাফাই, সফটওয়্যার সমস্যার কারণেই এই বিপত্তি। ওই সময় স্মার্ট কার্ড (Smart Card) দেওয়া হয়েছে, মোবাইলে টিকিট কাটা গিয়েছে। দেওয়া হয়েছে মান্ধাতা আমলের পিচবোর্ডের টিকিটও। তবে তা দিতেও যথেষ্ট বিলম্ব হয়েছে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়ানো যায়নি।
[আরও পড়ুন: বগটুইয়ের ভাদু শেখ খুনে অভিযুক্ত ছোট লালনের মৃত্যু]
যাত্রীদের বক্তব্য, যারা এদিন কলকাতায় (Kolkata) বেড়াতে বা বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য এসেছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই নিত্যযাত্রী নন। তাঁরা এসেছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে। অনেকে এসেছিলেন শুধু মেট্রোয় প্রথম চড়ার শখ পূরণ করতে। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বছরের প্রথম দিন তাঁদের নাস্তানাবুদ হতে হল। যাত্রীদের বক্তব্য, একদিনের জন্য তাঁরা স্মার্ট কার্ড কেন কিনবেন? আর কিউআর কোডের মাধ্যমে ই-টিকিট কাটতে জানেন কতজন! এমনিতেই সমস্ত স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে মেট্রো। যে কারণে টোকেন পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের। কিন্তু সে দুর্ভোগ তো নিত্য রুটিন হয়ে গিয়েছে। এদিন উৎসবের দিনে সব দুর্ভোগই যেন তুচ্ছ মনে হয়েছে।
শুধু উত্তর-দক্ষিণ কলকাতা মেট্রোই নয়। ইস্ট-ওয়েস্ট এবং জোকা-তারাতলা মেট্রোপথেও সোমবার টোকেন দেওয়া যায়নি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এদিন বিকেলে তখন বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে থিকথিকে ভিড়। তার মধ্যেই এক ব্যক্তি কবি সুভাষগামী চলন্ত মেট্রোর সামনে ঝাঁপ দিতে যান। গেল গেল রব ওঠে। যদিও স্টেশনে থাকা আরপিএফ কর্মীরা ধরে ফেলেন শেষমুহূর্তে। কিছুক্ষণের জন্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে।
একদিকে কল্পতরু উৎসব (Kalpataru Utsab) অন্যদিকে বছরের প্রথম দিন হওয়ায় শহরে আসা মানুষের ঢল। মানুষের যাতায়াতের মূল ভরসার জায়গা এদিন যেখানে ছিল শহরের লাইফলাইন, সেদিনই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে মেট্রো পরিষেবা। টোকেনের পরিবর্তে কাগজের টিকিটও কোথাও কোথাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভিড় এতটাই ছিল যে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, সফটওয়্যার সমস্যার কারণে টোকেন ইস্যু করা যায়নি। মেট্রো চালু হতেই টোকেন ইস্যু না হওয়ায় সবথেকে সমস্যায় পড়েন কাউন্টারে বসা কর্মীরা। যাত্রীদের সমস্যার কথা বোঝাতে কালঘাম ছুটে যায় তাঁদের। ঘটনার কথা জানার পরই সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফরমেশন সিস্টেমের (ক্রিস) আধিকারিকরা বিপত্তি মেটানোর চেষ্টা করেন।
[আরও পড়ুন: কামদুনি মামলায় এখনই গ্রেপ্তার নয়, সব পক্ষের জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট]
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায়। মেট্রোর আধিকারিকদের একাংশের দাবি, নতুন বছর হয়েছে। নতুন সিস্টেমে ডেট আপডেট করা হয়নি সম্ভবত। যে কারণে নতুন টোকেন ইস্যু করা যায়নি। যাত্রীদের বক্তব্য, এদিন এত বড় বিপর্যয়ের কথা, মেট্রোর তরফে সংবাদমাধ্যমেও জানানো হয়নি। তাহলে মানুষ তা জানতে পেরে মেট্রো স্টেশনে আসত না। কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে বিষয়টি একেবারে চেপে গিয়েছিল। মেট্রোরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘সফটওয়্যার সমস্যার কারণেই এই বিপত্তি হয়েছিল। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনার জন্য যাত্রীদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’