অভিরূপ দাস: সারাবছর খালি ছিল। কিন্তু পুজোর মুখে আচমকা চায়ের দোকান, খাওয়ার স্টল নিয়ে রাস্তা আটকে বসে পড়েছেন হকাররা। চিরাচরিত সে ছবি বদলাতে চলেছে এ বছর। নতুন করে আর হকার বসতে পারবে না শহরে। শুধু তাই নয়, এতদিন টাউন ভেন্ডিং কমিটিতে আলোচনার পর নিয়ম লঙ্ঘনকারী হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। নতুন এসওপি অনুযায়ী আগে পুলিশি ব্যবস্থা। তারপর আলোচনা।
সোমবার হকার সমস্যা নিয়ে মেয়র ইন কাউন্সিলদের সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সে বৈঠকে পাশ হয়েছে নতুন এসওপি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর। মেয়র জানিয়েছেন, “নতুন এই এসওপি শহরের হকার সমস্যা মেটাতে সাহায্য করবে।” কী এই সমস্যা? বাড়ির মূল ফটক আটকে হকার বসে পড়েছে, কিংবা ডালাওয়ালার অত্যাচারে ফুটপাথে হাঁটাচলার জায়গা নেই। এমন অভিযোগ ভুরিভুরি আসে মেয়রের কাছে। এতদিন এই অভিযোগ নিয়ে আগে আলোচনায় বসত টাউন ভেন্ডিং কমিটি। আলোচনা শেষ করে সমাধান বেরতে সময় লেগে যেত। টাউন ভেন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান দেবাশিস কুমার এ বিষয়ে জানিয়েছেন, নতুন করে যে এসওপি তৈরি হয়েছে তা অনুযায়ী হকারদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে তা নিয়ে টাউন ভেন্ডিং কমিটিতে আলোচনা হবে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের সুরেই সরব কানহাইয়া, অধীরের গলায় মমতা বিরোধিতা, ফের প্রকাশ্যে কংগ্রেসের কোন্দল]
পুরনো তিলোত্তমা ও বৃহত্তর কলকাতা মিলিয়ে এই মূহূর্তে হকারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার। এ সংখ্যা নিয়ে সন্দীহান হকার সংগ্রাম কমিটির নেতাই। হকারের সংখ্যা জানতে ২০১২ সালে শেষ সমীক্ষা হয়েছিল। তারপর আর তেমন সমীক্ষা হয়নি। হকার সংগ্রাম কমিটির নেতা শক্তিমান ঘোষ জানিয়েছেন, “সম্পূর্ণ সমীক্ষা হলেই জানা যাবে শহরে এই মুহূর্তে হকার কত।” বেআইনি হকার ঠেকাতে টাউন ভেন্ডিং কমিটির শংসাপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে হকারদের হাতে। সেই শংসাপত্র দেওয়ার পরেই শুরু হবে নতুন সমীক্ষা। নিয়ম অনুযায়ী শহরের মোট জনসংখ্যার আড়াই শতাংশ হকার থাকতে পারে। হকার সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সবাইকে শংসাপত্র দেওয়ার পর যদি দেখা যায় মোট জনসংখ্যার আড়াই শতাংশের কম হকার রয়েছে, তাহলেই নতুন হকিং লাইসেন্স দেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, টাউন ভেন্ডিং কমিটির শংসাপত্র পেতে হলে মানতে হবে নিয়ম। স্কুলের গেট আটকানো যাবে না। স্কুলের দু’দিকেই দশ ফুট করে রাস্তা ছাড়তে হবে। বসতে হবে ফুটপাথের তিনভাগের একভাগ নিয়ে। সমস্ত নিয়ম যাঁরা মানবেন তাঁরাই পাবেন টাউন ভেন্ডিং কমিটির শংসাপত্র। ইতিমধ্যেই ১৯ জন পেয়েছেন লাইসেন্স। নিয়ম হয়েছে, লাইসেন্স থাকলে তবেই হকিং করতে পারবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে সেই শংসাপত্র পাওয়া মানেই যে আজীবন হকিং করতে পারবেন, তা নয়। টাউন ভেন্ডিং কমিটির কো চেয়ারম্যান বিধায়ক দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, প্রত্যেক বছর পুনর্নবীকরণ হবে এই লাইসেন্স। যাঁরা নিয়ম মানবেন না তাদের লাইসেন্স আর পুনর্নবীকরণ করা হবে না।