কৃষ্ণকুমার দাস: স্থায়ী কর্মীদের মধ্যেও শূন্যপদ ২৮ হাজারের বেশি থাকলেও মাত্র এক তৃতীয়াংশ নিয়োগে সবুজ সংকেত দিল নবান্ন। একশোটি শূন্যপদে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের জন্য অনুমতি চেয়ে মাত্র ৩৩ জনের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে অর্থদপ্তর। শুধু তাই নয় টাইপিস্ট, সুইপার, ঝাড়ুদার, পিওনের মতো ১৬টি পদ কার্যত লুপ্ত হবে কলকাতা পুরসভায় (Kolkata Municipal Corporation)। নয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে অনুমোদিত স্থায়ী কর্মীসংখ্যা এক ধাক্কায় ৪৬ হাজার ৪৩০ থেকে কমে ২৭ হাজার হতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ, ২১৭ জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের শূন্যপদ পূরণের জন্য প্রথম দফায় ১০০ জন নিয়োগে অনুমতি চেয়ে ৩৩ জন পাওয়ায় হতাশ পুরকর্তারা। দিনকয়েক আগেই জঞ্জাল বিভাগে ৪৫৫৫ জন মজুর নিয়োগের জন্য পুর দপ্তরে আবেদন করে মাত্র ৮০০ জনের অনুমোদন মিলেছে। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, ২০১০ সালে পুরসভার স্থায়ী কর্মী ছিল ৩৪,০৬৯, অবসরের জেরে ২০২১-এর অক্টোবরে এসে ১৮,৩১৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতা নগরনিগমের মুখ্যপ্রশাসক ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “পুরসভায় এখন টাইপিস্ট লাগছে না, ডিটিপি অপারেটর প্রয়োজন। আগে হাতে ঠেলা গাড়ি দু-তিনজন মজদুর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরত, এখন একজনই ব্যাটারি চালিত গাড়ি নিয়ে অনেক বেশি জোনে জঞ্জাল সংগ্রহ করছে। ঝাড়ুদারের বদলে মেশিনই রাস্তা পরিস্কার করে।” এরপরই মুখ্যপ্রশাসক জানান, পুরসভায় কোন বিভাগে শূন্যপদে আর নিয়োগ দরকার নেই তা জানতে বিশেষ সংস্থাকে ‘মানবসম্পদ’ সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুরসভার অধীনে মহানগরের সমস্ত শ্মশান ও কবরখানায় সাব-রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য। তাই মাসখানেক আগে ১৫ জন সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগের আবেদন করে মাত্র তিনটি পদের অনুমোদন মিলেছে। বর্ষায় জল জমলে রাস্তায় ম্যানহোল খোলা ও জঞ্জাল সরানোর জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ২ জন করে গ্যাং-ম্যান ছিল, কিন্তু তা এখন শহরেই মাত্র ৬ জন। জল জমার অন্যতম কারণও এই কর্মীশূন্যতা। পানীয় জলে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন একের পর এক নতুন চালু হলেও ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত, ৩ মাস পর ঘুম ভাঙল চিকিৎসকের, জানেন না মা-বাবার মৃত্যুর খবর!]
মানবসম্পদ নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ সংস্থা বিভাগভিত্তিক তথ্য যাচাই করে বলছে, আগে ৬ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ কর্মী ‘হেলেদুলে’ ঘুরে বেড়াতেন পুরসভায়, মাত্র এক ভাগ কর্মী ও অফিসার কাজ করছিলেন। কিন্তু ফিরহাদ-অতীনরা নানা বিভাগে নজরদারি চালিয়ে কর্মীদের একটা বড় অংশকে গত দু’বছরে সক্রিয় করেছেন। গত ৩১ অক্টোবর তথ্য অনুসারে পুরসভায় এ গ্রেডে ২১৬৮, বি গ্রেডে ২৭৮৬, সি গ্রেডে ৩৯০৬ এবং ডি গ্রুপে ৯৪৫৮ জন অফিসার-কর্মী স্থায়ীপদে রয়েছেন।
পুরসভার এক শীর্ষকর্তা স্বীকার করেন, এখন মাত্র ৪০ শতাংশের মতো কর্মীকে সচল করা গেলেও একাধিক শীর্ষ অফিসারের মদতে কিছু কর্মী বসে বেতন পাচ্ছেন। স্থায়ী কর্মীদের বেতন রাজ্য সরকার দিলেও ১৬,৫০০ অস্থায়ী কর্মীর টাকা পুরসভাকেই দিতে হচ্ছে। আসলে কোনও শূন্যপদে অবসরের ২ বছরের মধ্যেই নিয়োগের জন্য আবেদন করলে অর্থ দপ্তরই অনুমোদন দেয়, কিন্তু তার চেয়ে বেশিদিন হলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগে। পুরকর্তারা স্বীকার করেছেন, আইনি জটিলতার পাশাপাশি পুরসভার পার্সোনাল বিভাগে দীর্ঘসূত্রিতার জেরে শূন্যপদ বাড়ছে।