বিশেষ সংবাদদাতা: তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) হাতেই যে কলকাতার দায়িত্ব থাকবে, সেটা অনেক আগেই স্পষ্ট ছিল। ফলে আজ পুরনির্বাচনের ফলপ্রকাশে মূলত আগ্রহ কয়েকটি সংখ্যাতত্ত্বের উপর। প্রথমত, তৃণমূল ঠিক কত আসন পাবে। ১৪৪ আসনের মধ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ১৩১টিতে তারা জিতেছিল। বুথফেরত সমীক্ষাও মোটের উপর সেইরকম দেখাচ্ছে। সংখ্যাটি কি এমনই হবে না কি ১৪০-এর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে শাসকদল। মূলত আগ্রহ তা নিয়েই। বিধানসভা ভোটে কলকাতায় তৃণমূলের ভোট ছিল ৬০ শতাংশ। এখন প্রশ্ন হল, এই সংখ্যা কি বাড়বে?
দ্বিতীয়ত, গতবার দখলে থাকা সাতটি আসনেই কি বিজেপি (BJP) জিততে পারবে? না কি, তাদের আসন বাড়বে নতুবা কমবে? সব আসনে তারা কি দ্বিতীয় হবে, না কি সিপিএম বা কংগ্রেস থাবা বসাবে? ক’টি আসনে থাকবে গেরুয়া শিবিরের জামানত? অতি বড় পদ্ম সমর্থকও ভাবতে পারছে না কলকাতার রায় তাদের পক্ষে যাবে। বরং নমো নমো করে মানরক্ষা হলেই যথেষ্ট।
তৃতীয়ত, বাম-কংগ্রেস শিবিরে লড়াইটা ইদানীং হয়ে দাঁড়িয়েছে নোটার (NOTA) সঙ্গে। সেই অসম্মান আজও কি বজায় থাকবে? না কি বিজেপিকে সরিয়ে তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে? এই সমস্ত প্রশ্নের নিষ্পত্তি হবে আজ। কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Election) ভোটগণনা শুরু হয়েছে সকাল আটটায়। এবার যেহেতু ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেই কারণে আশা করা যাচ্ছে দুপুর ১২টা-১টার মধে্যই সমস্ত ফল সামনে এসে যাবে। আরও স্পষ্ট করে বললে, সকাল দশটার মধ্যেই হয়তো ৯৫০ জন প্রার্থীর ভাগ্য কোন দিকে যাচ্ছে তা চূড়ান্ত হবে।
[আরও পডুন: বাবার অধিকারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর গ্রিভান্স সেলে ছাত্রীর চিঠি, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা]
রবিবার তেমন কোনও বড় ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছিল কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছিলেন। কিছু বুথে হাঙ্গামা হয়েছে রুটিনমতো। বড় কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তবু সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা। বোঝা গিয়েছে, শাসকের দাপটে এঁটে উঠতে না পেরে শেষে সন্ত্রাসকেই মুখরক্ষার হাতিয়ার করেছেন তাঁরা। বাস্তবে যুদ্ধক্ষেত্রে খুঁজেই পাওয়া যায়নি তাদের। স্বভাবতই, কেউই আশা করছেন না, আজ তৃণমূলের গড়ে বিরোধীদের পক্ষে কোনও ভাল খবর আসবে।
সংখ্যাতত্ত্বের লড়াই জয়ের ব্যবধানেরও। যেমন ফিরহাদ হাকিম, অতীন ঘোষ, দেবাশিস কুমার, দেবব্রত মজুমদারের মতো তৃণমূলের হেভিওয়েটরা কি স্বচ্ছন্দে ব্যবধান বাড়াবেন? না কি লড়াই হবে? তাঁদের জয়ের ব্যবধান কত হবে? বিধানসভা ভোটে ওয়ার্ডের ফলকে তাঁরা কি পিছনে ফেলতে পারবেন? তা নিয়ে অবশ্যই আগ্রহ থাকবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নজরকাড়া প্রার্থী যাঁরা দাঁড়িয়েছেন তাঁদের ফল কী হবে? বিজেপির (BJP) দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত অথবা কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক এই তৃণমূল ঝড়ের মধ্যে আদৌ কি নিজেদের গড় রক্ষা করতে পারবেন? জানা যাবে আজ।
[আরও পডুন: ফের ‘তৃণমূল’ কর্মীকে লক্ষ্য করে চলল গুলি, বেঁচে যাওয়ায় কুপিয়ে খুন]
বস্তুত, যে কোনও ভোটে জয়-পরাজয় সবসময়ই থাকে। কে জিতবে, কে হারবে তার আঁচ ভোটের আগে খানিকটা পাওয়া গেলেও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। কিন্তু, এই পুরভোটে অদ্ভুত পরিস্থিতি। শাসক জিতছেই। বিরাট ব্যবধানে জিতছে। উল্টোদিকে বিরোধীরা সংকুচিত হবেন। কতটা হবেন? তা নিয়েই যা একটু কৌতূহল। ছোট লালবাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে এটুকুই যা আগাম বলার।