কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: কর্মসূত্রে বিকাশ ভবনে আসা দশজন মাদ্রাসা শিক্ষকের (Madrasa Teacher) সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠল সল্টলেকের একটি গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের অভিযোগ, বুকিং থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের দোহাই দিয়ে একপ্রকার জোর করে গেস্ট হাউস (Guest House) থেকে বের দেওয়া হয়েছে। অচেনা শহরে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে কার্যত অসহায় অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে। তারপর শিক্ষকদের একটি সংগঠনের সহযোগিতায় ধরে প্রাণ ফিরে পান তাঁরা। ওই সংগঠনের সহযোগিতাতেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে বিষয়টি জানান। পাশাপাশি অভিযোগ দায়ের করেন বিধাননগর পুলিশের কাছে। সকালের এই পর্বের পর সন্ধ্যা নাগাদ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট।
সোমবার মালদহ থেকে কলকাতা আসেন ১০ মাদ্রাসা শিক্ষক। তাঁদের বিকাশ ভবনে ডাইরেক্টর অফ মাদ্রাসা এডুকেশন বিভাগে কাজ ছিল। সেই সূত্রেই এদিন ভোরে কলকাতায় আসা। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে এবং বিধাননগর পুলিশকে দেওয়া অভিযোগপত্রে তাঁরা জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে ঘর দেওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁদেরকে জানানো হয়েছে গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। এই ঘটনার কেন্দ্রে থাকা দু’টি গেস্ট হাউজের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির। সল্টলেক সেক্টর টু-এর ডিএল ৩৯ নম্বর বাড়ির একটি গেষ্ট হাউসের এক কর্মীর মাধ্যমে সিএল ১৬৪ নম্বর বাড়ির এড্রোলিস গেস্ট হাউসে মালদার ১০ শিক্ষকের জন্য তিনটি ঘর বুক করেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংগঠনের নেতা মইদুল ইসলাম। তাঁর বক্তব্য, বুকিং এর সময় অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপর এদিন সকালে গেস্ট হাউসে পৌঁছনোর পর বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে বোর্ডিং করেন ওই দশজন। তার কিছুক্ষণ পর গেস্ট হাউসের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিকাশ ভবন আসেন ১০ শিক্ষক। তারপর মেট্রো ওভারব্রিজের নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন তাঁরা। এরপর পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের সহযোগিতায় বিধাননগর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে বিষয়টি জানান।
[আরও পড়ুন : ফি দিতে না পারলেও কোনও ছাত্রকে বোর্ডের পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, নির্দেশ হাই কোর্টের]
মেহবুব রহমান, জাহাঙ্গীর গনি, ওবায়দুর রহমান-সহ আরও সাত জন মালদা থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁদের অভিযোগ, গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ অমানবিক আচরণ শুধু করেছেন এমনটি নয়, চরম দুর্ব্যবহারও করেছেন তারা। একপ্রকার বলপূর্বক গেস্টহাউস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সবাইকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএল ব্লকের ওই গেস্ট হাউসের এক কর্তার নাম তন্ময় মুখোপাধ্যায়। এদিন একাধিকবার ফোন করা হয় তাঁকে। কোনও উত্তর দেননি তিনি। তবে এই গেস্ট হাউসের এক কর্মী জানিয়েছেন, তাদের সমস্ত ঘর ভরতি ছিল বলে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামতে চলেছে সিপিএম। এদিন সংগঠনের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম এর প্রতিক্রিয়াতে বলেছেন, “এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনা ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি।”
[আরও পড়ুন : UGC’র নির্দেশিকা মেনে পরীক্ষার সময় কমাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বরাদ্দ আড়াই ঘণ্টা]
The post মুসলিম হওয়ার শাস্তি! ১০ মাদ্রাসা শিক্ষককে ঘর দিল না সল্টলেকের গেস্ট হাউজ appeared first on Sangbad Pratidin.