অর্ণব আইচ: মডেলিংয়ের টোপ দিয়ে বিদেশে নারী পাচার। বিদেশে যুবতীদের রীতিমতো বন্দি করে রেখে তাদের দিয়ে ‘সেক্সটরশন’ ও সাইবার ব্ল্যাকমেল করাচ্ছে সাইবার জালিয়াতরা। ইতিমধ্যেই কম্বোডিয়ায় সাইবার জালিয়াতির এই নতুন ‘হাব’-এর সন্ধান পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। রাজস্থানের ভরতপুরকে ছাপিয়ে এখন কম্বোডিয়ায় সুন্দরী যুবতীদের নিয়ে গিয়েই নতুন ‘মোডাস অপারেন্ডি’তে ফাঁদ পাতানো হচ্ছে। বিদেশে পাতা সেই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন কলকাতা বা এই রাজ্য-সহ দেশের বহু মানুষ।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, রাজস্থানের ভরতপুরের জালিয়াতরা দেশে ‘সেক্সটরশন’ শুরু করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরশীল ছিল। গ্রেপ্তারির পর ওই জালিয়াতরা বিভিন্ন সময় পুলিশকে জানিয়েছে যে, তারা রেকর্ড করে রাখা মহিলাদের ভিডিও কাজে লাগায়। এ ছাড়াও রেকর্ড করে রাখা কথোপকথনের মাধ্যমেও তারা এই ধরনের জালিয়াতি করে। কম্বোডিয়ায় সাইবার জালিয়াতদের ‘মোডাস অপারেন্ডি’ একই রকম হলেও তারা পুরো ‘প্যাকেজ’টাই অনেক আধুনিক করে তোলে।
[আরও পড়ুন: বাজেটে বেতনভুক কর্মীদের আয়কর স্বস্তি, নতুন কর কাঠামোয় বদল]
পুলিশের কাছে খবর, বিভিন্ন রাজ্যের সুন্দরী যে যুবতীরা মডেল হতে চান, তাঁদেরই টোপ দেওয়া হয়। মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশি জালিয়াতরা। তাঁদের বলা হয়, বিদেশে মডেলিংয়ের চাকরি করে প্রচুর টাকা রোজগার করা যায়। একবার কম্বোডিয়ায় পৌঁছতে পারলেই হল। সেখানে মডেলিং করতে পারবেন। এ ছাড়াও চিন, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, তাইল্যান্ডে তাঁদের বিভিন্ন সময় মডেলিং ও ফ্যাশন শোয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আকর্ষণীয় বেতন ছাড়াও ভ্রমণ ও থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ারও ফাঁদ পাতা হয়। এই ফাঁদে পা দেন বেশ কয়েকটি রাজ্যের যুবতী। তাঁরা অনলাইনে যোগাযোগ করলে তাঁদের ভুয়ো সংস্থার অফার লেটার ও বিভিন্ন ভুয়ো নথি দেওয়া হয়। অনলাইন পোর্টালে আবেদন করে তাঁরা যাতে কম্বোডিয়ায় পর্যটন ভিসা পেয়ে যান, সেই ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়। পর্যটনের নাম করেই মডেলদের কম্বোডিয়ায় নিয়ে যায় জালিয়াতরা। সেখানে পুহনম পেন, সিয়েম রিপ, বাট্টামব্যাংয়ের মতো শহরগুলিতে তাঁদের জালিয়াতরা নিয়ে যায়। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাঁ চকচকে অফিসে। অফিসের কর্মকাণ্ড দেখে প্রথমে তাঁরাও বুঝতে পারেন না যে, সেগুলি আসলে ভুয়ো কল সেন্টার। অফিসে যাওয়ার পরই ওই যুবতীদের পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁদের ঘরের ভিতর আটকে রেখে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কীভাবে সেক্সটরশনের ভিডিওয় ‘অভিনয়’ করতে হবে, তা-ও শেখানো হয়।
সরাসরি জালিয়াতরা বলে দেয়, ‘অভিনয়’-এর সময় তাঁদের শরীরে কোনও পোশাক রাখা চলবে না। এমনভাবে ‘অভিনয়’ করতে হবে, যেন তাঁদের উপর আকৃষ্ট হয়ে অনেকক্ষণ ধরে সেই ভিডিও দেখে ‘শিকার’। এমনকী, কীভাবে অনলাইনে সেই ‘শিকার’-এর সঙ্গে কথা বলতে হবে ও চ্যাট করতে হবে, তা-ও শিখিয়ে দেওয়া হয়। ওই যুবতীদের ‘টার্গেট’ও দিয়ে দেওয়া হয়। সেই ‘টার্গেট’ পূরণ না হলে তাঁদের উপর অত্যাচারও চালায় সাইবার জালিয়াতি চক্রের মাথারা। সেক্সটরশনের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে ব্ল্যাকমেল করতে হবে, তা-ও শিখিয়ে দেওয়া হয় ওই যুবতীদের। কম্বোডিয়ার ভুয়ো কল সেন্টারের জাল কেটে থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজনের কাছ থেকে পুলিশ এই তথ্য পায়। কলকাতা পুলিশের পরামর্শ, কম্বোডিয়ার মতো বিদেশে চাকরির অফার পেলেও ভাল করে যাচাই করে দেখতে। মহিলারা এভাবে বিদেশে মডেলিংয়ের অফার পেলেও তাঁদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।