অর্ণব আইচ: পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা রোজগারের লোভ! আর তার জন্য জালিয়াতদের দলে নাম লিখিয়ে ছিল রাজস্থানের এক বি ফার্মার ছাত্র। দোসর হয়েছিল মরুরাজ্যেরই আরেক যুবক। সাইবার জালিয়াত চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতারণার লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে রেখেছিল তারা। টেলিগ্রাম অ্যাপে জালিয়াতির অভিযোগে রাজস্থানের দুঙ্গারপুর থেকে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা। মঙ্গলবার দুজনকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই যুবকের নাম রাজেশ রাই ও নীলেশ কাটারা। কলকাতারই বাসিন্দা এক মহিলা গত বছর লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। মহিলার অভিযোগ ছিল, প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর কাছে একটি মেসেজ আসে। তাঁকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করতে বলা হয়। লগ্নি করলে বিপুল টাকা লাভ হবে বলে টোপ দেওয়া হয়। তিনি ওই মেসেজে সাড়া দেন। তখন তাঁকে টেলিগ্রাম অ্যাপের একটি গ্রুপে যোগ করা হয়।
[আরও পড়ুন: ফের কলকাতায় যুবককে বেধড়ক মার, ‘গণপিটুনি’ নয়, বলছে পুলিশ]
জানা গিয়েছে, ওই গ্রুপের মাধ্যমে অভিযোগকারিণী লগ্নি করতে থাকেন। ওই গ্রুপের অন্য সদস্যরাও জানাতে থাকেন যে, তাঁরা লাভবান হয়েছেন। ওই মহিলাও লগ্নি করার পর প্রথমে কিছু টাকা পান। অন্যদের মেসেজ পাওয়ার পর লোভে তিনি আরও টাকা লগ্নি করতে থাকেন। একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁকে অনলাইনে টাকা পাঠাতে বলা হয়। কয়েক লাখ টাকা লগ্নি করার পর তিনি লভ্যাংশ ফেরত চাইলে তাঁকে জানানো হয়, টাকা ফেরত পাওয়ার সময় তাঁর আসেনি। আরও টাকা লগ্নি করলে তিনি লভ্যাংশ সমেত টাকা ফেরত পেতে থাকবেন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে তিনি ক্রমে ১৯ লাখ ৮ হাজার টাকা লগ্নি করেন। কিন্তু হঠাৎই টেলিগ্রামের সেই অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হাতিয়ে নেওয়া হয় ওই মহিলার বিপুল টাকা। এর পরই তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ তদন্ত শুরু করার পর জানতে পারে, রাজস্থানের বেশ কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এই সাইবার জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কলকাতা থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে। ওই টাকার সিংহভাগই রাজস্থানের দুঙ্গারপুরের দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোর দুই মালিক রাজেশ রায় ও নীলেশ কাটারা।
ধৃতদের মধ্যে রাজেশ রায় দাবি করে, সে দুঙ্গারপুরেরই একটি কলেজে বি ফার্মার ছাত্র। ওই দুই তরুণই অতিরিক্ত টাকা রোজগারের জন্য সাইবার জালিয়াতদের দলে ভিড়ে গিয়েছিল। তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা এলে, তা এটিএম কার্ডে তুলে জালিয়াতদের হাতে দেওয়া হলে কমিশন পেত তারা। কাদের মাধ্যমে তারা জালিয়াতদের দলে যোগ দিয়েছিল ও এই দলে কারা রয়েছে, তা জানতেই ওই দুই তরুণকে গোয়েন্দারা জেরা করছেন। তাদের জেরা করেই অন্য সাইবার জালিয়াতদের সন্ধান চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।