দীপঙ্কর মণ্ডল: এবার পুলিশের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে অনশন তোলার অভিযোগে সরব এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে কলকাতা পুলিশের কয়েকজন আধিকারিক এসে কার্যত হুমকি দিয়ে তাঁদের শান্তিপূর্ণ অনশন তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাঁদের বলেন, সেনার তরফে নাকি আপত্তি করা হয়েছে৷ তাই অনশন মঞ্চ তুলে দিতে হবে৷ নাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় অনশন তুলে দেওয়া হবে৷
[ আরও পড়ুন: বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে রাজ্যে ৩০% স্পর্শকাতর বুথে সিলমোহর কমিশনের ]
অনশনকারীদের বক্তব্য, ওই পুলিশ আধিকারিকরা তাঁদের বলেন, যেহেতু সেনার এলাকায় একটানা ২৪ দিন ধরে ওই অনশন চলছে, তাই সেই বিষয়ে সেনার তরফে পুলিশের কাছে নাকি আপত্তি জানান হয়েছে৷ এবং আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে কোনও অশান্তি হতে পারে৷ এবং হিংসা হতে পারে৷ তাই পুলিশের তরফে অনশনকারীদের বলা হয় মঞ্চ তুলে ফেলতে৷ এবং কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনের ওই এলাকা খালি করে দিতে৷ এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের একপ্রকার হুমকি দিয়ে ওই পুলিশ কর্মীরা বলেন, নাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় অনশন মঞ্চ তুলে দেওয়া হবে৷
জানা গিয়েছে, পুলিশের ওই বক্তব্যের পরেও অনশন চালিয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন, অনশনকারীরা৷ তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা একমাসের সামান্য কম সময় ধরে এখানে বসে রয়েছি৷ এখানে এমন কিছুই করছি না যাতে হিংসা ছড়াবে৷ আমরা কোনও প্ররোচনা করছিও না৷ এবং কোনও প্ররোচনায় পা-ও দিচ্ছি না৷ কেবল নিজেদের দাবির স্বার্থে এখানে অনশন করছি৷ এখানে কোনও অস্ত্র নেই৷ লাঠি বা দাহ্য বস্তু বা কোনও নিষিদ্ধ বস্তু নেই৷ তাই হিংসার কোনও সম্ভবনাই নেই৷’’ তাঁরা আরও জানান, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এখানে এসেছেন৷ শিক্ষামন্ত্রীও এসেছেন৷ শিল্পী-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে গণসংগঠনের কর্মীরা এসেছেন৷ সবার কাছে খবর নিতে পারেন৷ এখানে কোনও আপত্তিকর কিছু আছে কিনা৷’’
[ আরও পড়ুন: ড্রেজার পরিষ্কারে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন শ্রমিক, কাঠগড়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ]
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই সেনার জমিতেই অনশনের প্রসঙ্গ টেনে পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেন ওই সময় সেখানে উপস্থিত প্রাক্তন আইপিএস নজরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো সেনার এলাকায় ২৬ দিন অনশন করেন৷ কিন্তী তখন তো পুলিশ বা প্রশাসন এসে হুমকি দেয়নি৷ তবে নিজেদের দাবিতে অনশনে বসা ছাত্রদের কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে কেন৷’’ চাকরি প্রার্থীরা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে ওই ঘটনা ঘটলেও, রাতভর আতঙ্কে ছিলেন তাঁরা৷ দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি৷ অন্যদিকে, গতকালই ওই অনশন মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তানিয়া শেঠ নামের এক চাকরি প্রার্থী৷ অভিযোগ, অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা করতে নিয়ে গেলে, তানিয়া শেঠের চিকিৎসা করতে অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তপক্ষ৷ তাঁদের তরফে জানান হয়, তানিয়ার কিছু হয়নি৷ তবে রাতে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তানিয়া৷ তখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয়৷ সেখানেই এখন তিনি চিকিৎসাধীন৷
রবিবার ২৫তম দিনে পড়ল এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের এই অনশন৷ ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭০ জন৷ অনেকেরই ইউরিন ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ বিশেষ করে শৌচালয়ের সমস্যায় ভুগছেন মহিলারা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সকালে সুলভ ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও রাতে তা সম্ভব হয় না৷ ফলে সারা রাত একপ্রকার জল না খেয়েই কাটাতে হয়৷ ফলে ইউরিন ইনফেকশনের মতো সমস্যা বাড়ছে৷