অর্ণব আইচ: ব্যাকগ্রাউন্ডে দুর্গাপ্রতিমাকে রেখে সেলফি আর ছবি তোলার ধুম। তার উপর ভিড় মণ্ডপেই ফেসবুক লাইভের চেষ্টা। আবার কখনও ঠাকুর দেখার ‘পরিশ্রমে’ ক্লান্ত হয়ে একটু দাঁড়িয়ে ফ্যানের হাওয়া খেয়ে নেওয়া। আর এতেই পুজোয় মণ্ডপগুলির ভিতরে ভিড়, আবার বাইরে লাইন আরও বড় হতে পারে বলে অভিমত পুলিশের। যদিও পুজো ভলান্টিয়ারদের এই ব্যাপারে সতর্ক করার পরেও কতটা সুরাহা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান লালবাজারের পুলিশকর্তারাও। তাই এবার পুজো উদ্য়োক্তাদের সাহায্য নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে সতর্কীকরণের প্রচারের পরিকল্পনা পুলিশের। সেলফি বা ছবি তোলা বা ফেসবুক লাইভ করার জন্য সকালের দিকে ফাঁকা মণ্ডপে আসার পরামর্শ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও প্রচার করতে উদ্য়োগ নিচ্ছে লালবাজার।
[আরও পড়ুন: এখন প্রত্যাহার, অক্টোবরের শেষের মধ্যে কেন্দ্রের উত্তর না মিললে ফের ধরনায় বসব: অভিষেক]
পুলিশ জানিয়েছে, এই সমস্যা শুরু হয়েছে গত কয়েক বছর থেকেই। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় ভোর পর্যন্ত দেখা যায়, কলকাতার বড় মণ্ডপগুলিতে লাইন দিয়ে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু যত সংখ্যক দর্শনার্থী মণ্ডপে প্রবেশ করছেন, তত সংখ্যক দর্শনার্থী একসঙ্গে বাইরে বের হচ্ছেন না। তাই মণ্ডপের বাইরে বেড়েই চলেছে দর্শনার্থীদের লাইন। পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বা ভলান্টিয়াররা তাঁদের ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করলেও অধৈর্য্য হয়ে পড়ছেন অনেকে। পুলিশকর্তাদের দাবি, এর জন্য মূল দায়ি সেলফি আর গ্রুপি, অথবা ছবি তোলা। তার উপর এখন ভিড় মণ্ডপে ফেসবুক লাইভ করাও যেন এখন ‘ট্রেন্ড’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ দর্শনার্থীই ব্যাকগ্রাউন্ডে দুর্গাপ্রতিমা রাখতে চান। আবার কেউ বা রাখতে চান মণ্ডপসজ্জা। এর পর কেউ তুলতে শুরু করেন সেলফি। আবার কোথাও বা বন্ধুরা মিলে ‘গ্রুপি’ তুলতে শুরু করেন।
আবার কেউ বা সঙ্গীর হাতে মোবাইল দিয়ে বলেন ছবি তুলে দিতে। পুলিশকর্তাদের দাবি, মণ্ডপের ভিতর থাকা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী বা পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা বারবার দর্শনার্থীদের অনুরোধ করা সত্ত্বেও সেলফি, গ্রুপি অথবা ছবি তোলার ধুম কমে না। অনেকে আবার ‘লাইভ’ শেষ না করে মণ্ডপ ছেড়ে বের হতে চান না। আর তাতেই বাড়ে সমস্যা। মণ্ডপের ভিতর জমতেই থাকে ভিড়। তাঁরা বাইরে বের না হওয়া পর্যন্ত অন্য দর্শনার্থীরা মণ্ডপের ভিতর প্রবেশ করতে পারেন না। তাই বাইরে বেড়েই চলে লাইন। আবার মণ্ডপের ভিতরে ফ্যান চললে তার সামনে দাঁড়িয়ে একটু বিশ্রামও নিতে থাকেন বহু দর্শনার্থী। তাতেও মণ্ডপের ভিতর ভিড় বাড়তে থাকে বলে অভিমত পুলিশের। এই সমস্যা এড়াতে এবার পুজোর মুখে বিভিন্নভাবে দর্শনার্থীদেরই সচেতন করছে লালবাজার। সূত্রের খবর, মণ্ডপগুলির বাইরে পুজো উদ্য়োক্তাদের সাহায্য নিয়ে সচেতনতার প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশের। সেই ক্ষেত্রে যাঁরা বাইরে লাইনে অপেক্ষা করছেন, সেই দর্শনার্থীদেরই অনুরোধ করা হবে, তাঁরা যেন প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জা দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসেন। এই ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সচেতন করা হবে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, মণ্ডপে দর্শনার্থীরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করবেনই। এর মধ্যেও তাঁরা চেষ্টাও করবেন ছবি বা সেলফি তুলতে। সেই কাজ তাঁরা তাড়াতাড়ি করলেও বেশি সমস্যা হবে না। কিন্তু অনেকেই মণ্ডপের ভিতর ফেসবুক লাইভ করতে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই সকালের দিকে যখন মণ্ডপ ফাঁকা থাকে, তখন সেলফি, গ্রুপি, এমনকী, ফেসবুক লাইভ করলেও সমস্যা হবে না, এমনভাবেই দর্শনার্থীদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।