অর্ণব আইচ: খরচ মাত্র দু’শো টাকা। এই সামান্য খরচেই দুর্ঘটনা ঘটানোর হাত থেকে নিস্তার পেতে পারে ট্রাক বা বাসের মতো বড় যান। বাঁচতে পারে বহু প্রাণও।
ভিলেনের নাম ‘ব্লাইন্ড স্পট’। গাড়ির সামনে দিয়ে মানুষ বা কোনও সাইকেল চলে গেলেও স্টিয়ারিংয়ে বসে থাকা চালকের চোখে তা পড়ে না। তাতেই শহরে ঘটেছে বহু দুর্ঘটনা। বেহালা চৌরাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যুর পর এবার নতুন করে অটো ও বাসের চালকদের ক্লাস নিতে শুরু করেছেন ট্রাফিক আধিকারিকরা। মূলত অটো ও বাস টার্মিনার্সের কাছাকাছি কোনও হলঘর নিয়েই চলছে এই ক্লাস। চালকদের জেব্রা ক্রসিং থেকে শুরু করে গাড়ির গতি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। ওভারটেকিং যে কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাও বোঝানো হচ্ছে চালকদের। একই সঙ্গে স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদেরও ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন করছে পুলিশ।
সম্প্রতি বেহালা চৌরাস্তায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটির ক্ষেত্রেও ব্লাইন্ড স্পটকেই দায়ী করছে পুলিশ। লালবাজারের এক ট্রাফিক কর্তা জানান, এর আগেও কলকাতায় বেশ কিছু বাস ও লরি বা ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার জন্য দায়ি ব্লাইন্ড স্পটই। গাড়ির সামনে দিয়ে ব্যক্তি বা সাইকেল গেলে কয়েক ফুট দূরত্বে বড় গাড়ির চালক কিছু দেখতে পান না। আবার এমনও ঘটে যে, বাস বা ট্রাকের গা ঘেঁষে কোনও বাইক চললেও তা অনেক সময় চালকের চোখে দৃশ্যমান হয় না। একইভাবে বাসে ওঠানামার সময় সেই দৃশ্য বাসের চালক না দেখার কারণেও যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই তথ্যও এসেছে ট্রাফিক পুলিশের কাছে। শেষের এই সমস্যাটি মেটানোর জন্য আগে থেকেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। প্রত্যেকটি বাস ও ট্রাকের ডানদিকে বড় আয়না বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাতে বাসে ওঠানামা ও দু’পাশে বাইকের চলাচল চোখে পড়ে। কিন্তু গাড়ির সামনের ব্লাইন্ড স্পটের মধ্যে কোনও ব্যক্তি বা সাইকেল চলে আসছে কি না, তা ওই আয়নায় দেখা যায় না। তাই এবার কলকাতার প্রত্যেকটি সরকারি, বেসরকারি বাস ও লরি বা ট্রাকে ‘ফ্রন্ট ভিউ মিরর’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার।
[আরও পড়ুন: যাদবপুরে পড়ুয়া মৃত্যু: সমকামী বলে হেনস্তা স্বপ্নদীপকে? ছাত্রমহলে অন্য কাহিনী]
জানা গিয়েছে, ওই আয়নাগুলির দাম দু’শো টাকার বেশি নয়। অথচ ওই আয়না বসালে বাস বা ট্রাকের সামনের দৃশ্য স্পষ্ট ভেসে উঠছে চালকের সামনে। এক ট্রাফিককর্তা জানান, অনেক সময়ই সামান্য খরচ করেও বাস বা ট্রাক মালিকরা আয়না লাগাতে চান না। তাই এবার প্রত্যেকটি বাস ও ট্রাক টার্মিনার্সে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষেই জোগাড় করে দেওয়া হচ্ছে ওই ‘ফ্রন্ট ভিউ মিরর’ বা আয়না। এমনকী, পুলিশকর্মীরাও কয়েকটি বাস ও ট্রাকে বসিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, গাড়ির কোন জায়গায় ও কীভাবে ওই ফ্রন্ট ভিউ মিরর বসাতে হয়। ট্রাফিক গার্ডগুলি এমনভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে কলকাতায় যাতায়াত করে, এমন প্রত্যেকটি ভারী গাড়িতে এই আয়না বসানো হয়। তাতে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও অনেকাংশে কমানো যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।