অর্ণব আইচ: ৭৪ দিনের মধ্যে কোকেনকাণ্ডের চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) নারকোটিক্স বিভাগ। উল্লেখযোগ্যভাবে, ১২০০ পাতার সেই চার্জশিটে নাম নেই ধৃত বিজেপি (BJP) যুবনেত্রী পামেলা গোস্বামীর। বাদ গিয়েছে আরও দু’জনের নাম। তবে বন্দর এলাকার প্রভাবশালী বিজেপি নেতা তথা এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত রাকেশ সিংয়ের নাম রয়েছে চার্জশিটে। রয়েছে তাঁর সঙ্গী অমৃতরাজ সিং-সহ আরও ৮ জনের নামও। এই অমৃতরাজই কোকেন সরবরাহের মূল পান্ডা বলে পুলিশের দাবি। রাজ্যে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তৃণমূল ফিরে আসতেই ফের এই কাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কলকাতা পুলিশ। চার্জশিট পেশ করে দ্রুত এর কিনারা করতে চান তদন্তকারীরা।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ, আলিপুরের এনআর অ্যাভিনিউ থেকে গাড়িতে ৭৮ গ্রাম কোকেন (Cocaine)-সহ বিজেপি যুব নেত্রী পামেলা গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পামেলা হুগলির জেলার যুব নেতৃত্বের পর্যবেক্ষক পদে ছিলেন। গ্রেপ্তার হয় তাঁর বন্ধু প্রবীর দে এবং নিরাপত্তারক্ষী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে সেসময় বেশ তোলপাড় পড়েছিল কলকাতায়। কে বা কারা কীভাবে পামেলাকে মাদক সরবরাহ করত, এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, পামেলার টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করে কলকাতা পুলিশ। মোট ৮০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ৫ মে শপথগ্রহণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, বৈঠকের পর জানালেন পার্থ]
জেরায় উঠে আসে বন্দর এলাকার প্রভাবশালী বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের নাম। পামেলা সরাসরি রাকেশের বিরুদ্ধে মাদক পাচার চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেন। প্রকাশ্যে এনেছেন আরও বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য। জানান, রাকেশ সিং তাঁকে ভোটে টিকিট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিউ আলিপুরে দেখা করতে বলেন। সেখানেই রাকেশের এক সঙ্গী সুযোগ বুঝে তাঁর গাড়িতে কোকেনের প্যাকেট রেখে দেয়। নিজের অজান্তেই এরপর কোকেন-সমেত ধরা পড়েন পামেলা। বিষয়টি নিয়ে ক্রমশ জটিলতা বাড়তে থাকায় তোলপাড় শুরু হতেই গুরুত্ব বুঝে এই মামলার দায়িত্বভার নেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
[আরও পড়ুন: ‘২৪ ঘণ্টায় ৫ বিজেপি কর্মীর মৃত্যু’, ভোটের ফলের পর পরিসংখ্যান দিয়ে অভিযোগ দিলীপের]
তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাকেশকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে গেলে প্রথমে বাধার মুখে পড়ে। তবে তাতে শেষরক্ষা হয়নি। গ্রেপ্তার হতেই হয়েছে রাকেশ সিংকে। পরে তাঁর আরও দুই সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাকেশ আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন। মাঝে ভোটের কারণে এই মামলার তদন্তের গতি খানিকটা শ্লথ হয়েছিল। তবে ভোটপর্ব মিটতেই ফের তদন্তে গতি এনে ঘটনার তিনমাসের মধ্যেই চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, চার্জশিটে নাম নেই পামেলা গোস্বামী, তাঁর বন্ধু প্রবীর এবং নিরাপত্তারক্ষীর। তিনজনকেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে রাকেশ সিংয়ের নাম রয়েছে এতে। আপাতত কোকেন কাণ্ডের কিনারা করতে রাকেশই মূল টার্গেট তদন্তকারীদের। মনে করা হচ্ছে, রাকেশ সিংই পাচার চক্রের খুঁটিনাটি জানেন। সোমবার চার্জশিট পেশের পর এই মামলার গতি কোন পথে এগোয়, সেটাই দেখার।