অর্ণব আইচ: ভেঙে পড়েছে পুরনো বাড়ি। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছেন বাসিন্দারা। ভিতরে অন্ধকার। বোঝার উপায় নেই, কোথায় তাঁরা আটকে রয়েছেন। বাড়ি বা সেতু ভাঙার ঘটনা, অথবা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়, এবার উদ্ধারকার্যে নামবে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) দুই নতুন সদস্য ‘শ্লোকা’ ও ‘মন্ত্র’। বিপর্যয়ের ঘটনাস্থলে গিয়ে গন্ধ শুঁকেই কলকাতা পুলিশের উদ্ধারকারী টিমকে জানিয়ে দেবে, কোন জায়গা থেকে উদ্ধার করতে হবে, অথবা কেউ ধ্বংসস্তূপের ভিতরে আটকে রয়েছেন কি না।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতায় বহুবার পুরনো বাড়ি ভেঙে ধ্বংসস্তূপে আটকে গিয়েছেন বাসিন্দারা। এ ছাড়াও সেতু ভেঙে পথচারী বা গাড়ি-বাইক আরোহীদের আটকে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ভিতরে কেউ আটকে রয়েছেন কি না, তার সন্ধান শুরু করে কলকাতা পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ। বড় ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় উদ্ধারকারী দল এনডিআরএফ-ও উপস্থিত হয়। ওই দলের সঙ্গে থাকে এনডিআরএফ-এর নিজস্ব ডগ স্কোয়াড। ওই সারমেয় বাহিনী আটকে থাকা মানুষের সন্ধান করে সঙ্গে থাকা এনডিআরএফ কর্মীদের তার সন্ধান দেয়। এবার এনডিআরএফ-এর আদলেই তৈরি করছে ডগ স্কোয়াডের বিশেষ বিপর্যয় মোকাবিলার টিম। আপাতত ওই টিমের সদস্য দু’জন। তারাই হল ‘শ্লোকা’ আর ‘মন্ত্র’।
[আরও পড়ুন: মাঝরাতের গোপন চিঠিতে ব্রাত্যর নামে নালিশ? রাজ্যপালের জোড়া ‘পত্রবোমা’ ঘিরে তুঙ্গে জল্পনা ]
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে ‘শ্লোকা’ হচ্ছে ডোবারম্যান ও ‘মন্ত্র’ হচ্ছে ককার স্প্যানিয়েল প্রজাতির। ‘শ্লোকা’র বয়স চার মাস। মাত্র দু’মাসের শাবক হচ্ছে ‘মন্ত্র’। ‘শ্লোকা’ মেয়ে ও ‘মন্ত্র’ পুরুষ। এর আগে কলকাতা পুলিশের কয়েকটি সারমেয়কে বিএসএফ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অন্যান্য কাজের সঙ্গে উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তা খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি। এবার কলকাতায় বিপর্যয় মোকাবিলায় সারমেয় বাহিনীকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করার পরই লালবাজারের পক্ষ থেকে এনডিআরএফকে চিঠি লিখে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের নতুন সারমেয় শাবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এনডিআরএফ সবুজ সংকেত দেওয়ামাত্রই সারমেয়শাবক খোঁজার কাজ শুরু হয়। এর পরই দুই কুকুরপ্রেমীদের মধ্যে একজন ‘শ্লোকা’ ও অন্যজন ‘মন্ত্র’ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ডোবারম্যান ‘শ্লোকা’র চেহারা ছিপছিপে হওয়ার ফলে অপরিসর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সে প্রয়োজনে প্রবেশ করতে পারবে। আবার ককার স্প্যানিয়েল ‘মন্ত্র’ ছোট চেহারার হওয়ার ফলে যেখানে মানুষের প্রবেশ করার সম্ভাবনা নেই, সেখানেও সে প্রবেশ করে আটকে থাকা মানুষের সন্ধান চালাতে পারবে। প্রাথমিকভাবে তাদের ডগ স্কোয়াডেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আগামী ডিসেম্বর মাসে তাদের পাঠানো হবে ওড়িশার কটকে, এনডিআরএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। সেখানে তাদের সাঁতার থেকে শুরু করে অত্যন্ত অপরিসর জায়গায় গিয়ে খোঁজ চালানো, সব রকমেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরের বছর থেকে তারা কলকাতায় বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।