অর্ণব আইচ: গেমের নাম PUBG। জনপ্রিয় এই মোবাইল গেমটিতেই আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন আইন কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনার সময়ও তিনি ব্যস্ত গেম নিয়ে। মোবাইল গেমের এমন নেশার জন্য বকাবকি করেছিলেন মা। আর তাতেই জীবনের চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ছাত্র। রবিবার সকালে ঘরের ভিতর থেকেই উদ্ধার হয় সৌম্যজিৎ পালের (১৯) ঝুলন্ত দেহ। দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুটিয়ারির বাগানপাড়ার এই ঘটনায় ছড়ায় চাঞ্চল্য।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, PUBG গেমটি নিয়ে ঘরে ঘরে অশান্তি। এই অনলাইন গেম খুব অল্প সময়েই যুবক ও তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গেমটি টিম বানিয়ে তিন বা চারজনও অনলাইনে খেলেন। যুদ্ধের এই গেমটিতে ‘মিশন’ দেওয়া থাকে। সেই মিশন জয় করতে পারলে উইনার পান ‘চিকেন ডিনার’। এমনকী, অনলাইনে খরচ করলে যুদ্ধের এই মিশনের জন্য কেনা যায় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র, সেনাদের জামাকাপড় ও আরও অনেক জিনিসপত্র। তাতে বাস্তবতার কোনও জায়গা নেই। তবে পুরোটাই ভার্চুয়াল। আর এই কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতেই গেমটিতে আসক্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। PUBG-তে আসক্ত হয়েছিলেন রিজেন্ট পার্কের সৌম্যজিৎও।
[আরও পড়ুন: ফের কলকাতায় নিঃসঙ্গ বৃদ্ধের রহস্যমৃত্যু, বাড়ি থেকে উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ]
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই দিন ও রাতে বিভিন্ন সময়ই পাবজি খেলতেন ওই ছাত্র। প্রথমে মা শ্যামলী পাল কিছু বুঝতে পারেননি। কিন্তু ক্রমাগত মোবাইল নিয়ে ছেলেকে এই গেম খেলতে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি বুঝতে পারেন, ছেলে মোবাইল গেমটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। মা কয়েকবার বারণ করলেও ছেলে শোনেননি। তা নিয়ে পরিবারে অশান্তিও হয়। শনিবার রাতে পড়াশোনা না করে ওই মোবাইল গেম খেলতে দেখে সৌম্যজিৎকে বকাবকি করেন মা। এদিন সকালে উঠে স্নান করেন তরুণ। তাঁর বাবা সৌমেন পাল জানিয়েছেন, সকালে ছেলের আচরণে কিছুই বোঝা যায়নি। তাঁর ছেলে ঘরের ভিতরেই ছিলেন। দরজা আলগা করে বন্ধ ছিল। খিল দেওয়া ছিল না। ধাক্কা দিয়ে খুলে অভিভাবকরা দেখেন, গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে সিলিং থেকে ঝুলছেন সৌম্যজিৎ। যদিও কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবেশিকা পরীক্ষায় খুব ভাল নম্বর পেয়ে আইন কলেজে ভরতি হন ওই ছাত্র। মায়ের সঙ্গে বসে অ্যাডভোকেট নামে একটি সিরিয়ালও দেখতেন। মাকে বলতেন, আইন পাশ করে তিনি বিচারপতি হতে চান। অনেক বড় হতে চান। মা-ও ছেলেকে নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলেন। যখন ব্লু হোয়েল গেমের উপর তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে পড়ছিলেন, তখন মায়ের সঙ্গে তাঁর ওই গেম নিয়ে আলোচনা হত। মাকে বলেছিলেন, গেমের জন্য তিনি আত্মহত্যা করবেন না। ব্লু হোয়েলকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাবজিকে পারলেন না। খুবই চুপচাপ থাকতেন সৌম্যজিৎ। বিশেষ কারও সঙ্গে মিশতেন না। তাঁর মনে কোনও অবসাদ এসেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: যাদবপুরের মেসে পোশাক ফতোয়া, মালকিনের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ তরুণীর]
The post PUBG-তে আসক্তি, বাধা পেয়ে আত্মঘাতী খাস রিজেন্ট পার্কের মেধাবী ছাত্র appeared first on Sangbad Pratidin.