সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তর কলকাতার উত্তর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই। বিজেপির তাপস-সাধনা ভোটের আগে একটু ঝড় তুললেও, ভোটের ফলাফলে কার্যত নিষ্প্রভ হয়ে গেল। মর্যাদার লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন তৃণমূলের 'সনাতন' সৈনিক।
এমনিতে কলকাতা উত্তর (Kolkata Uttar) যে প্রতিবার খুব চমকপ্রদ রাজনৈতিক বিরোধিতার সাক্ষ্য দেয়, তা নয়। গোটা বাংলা জানে, সাম্প্রতিক অতীতে সেখানে ভোট হয় সাধারণত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই। সেই কেন্দ্র এবারে হয়ে উঠল সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সৌজন্যে, তাপস রায়ের দলবদল। কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, তৃণমূলের (TMC) নিজস্ব দ্বন্দ্বও নাকি উত্তরের পথের কাঁটা। ভোটের ফলাফলে যখন শেষ হাসি হাসছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন প্রেক্ষপটটি আর একবার ফিরে দেখা যাক।
ভোটের ঠিক আগে ইডি (ED) তল্লাশির মুখে পড়েন বরানগরের এককালের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। তারপরই তাঁর দলবদল। সোজা বিজেপিতে (BJP)। আর সেই সূত্রেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অন্দরের অসন্তোষ প্রকাশ্যে চলে আসা। একের পর এক ঘটনা শাসকদলকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সেই অস্বস্তিকে সম্বল করেই কোমর বেঁধে নেমে পড়ে বিজেপি। পাঁচবারের সাংসদকে হারাতে কার্যত কলকাতা উত্তরকে পাখির চোখ করে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
ফাইল ছবি।
এই আবহেই উত্তরের হয়ে পালটা আসরে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। পাশে দাঁড়ালেন সুদীপের। লোকসভার লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজি রেখেছিলেন তাঁর পুরনো সৈনিক সুদীপের উপরই। দলের একাংশ তা ভালোভাবে নেয়নি বুঝতে পেরে ময়দানে নামেন স্বয়ং দলনেত্রী। তার পর থেকেই তথাকথিত বিরোধ-বিক্ষোভ মিটতে শুরু করল মমতা-ম্যাজিকে। অতএব খানিকটা বেপথু কলকাতা উত্তর আবার ভোটের ঠিক রাস্তাই চিনে ফেলল। অন্দরের চোরাস্রোত কাটাতে প্রচারের একেবারে শেষ মুহূর্তে উত্তর কলকাতায় পাঁচ পাঁচটি জনসভা আর রোড শো, নেতা-মন্ত্রী-কাউন্সিলরদের ব্যক্তিগতভাবে ফোনেই ছিল 'ওষুধ'। তাঁর বার্তা পেয়েই মূলত 'অভিমান' ভুলে একজোট হয়ে ভোটে নামে উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতৃত্ব।
[আরও পড়ুন: জিতেও যেন কাশীধামে হেরে গেলেন মোদি! উনিশের তুলনায় ব্যবধান কমল ৩ লক্ষেরও বেশি]
তাপস রায় (Tapas Roy)অবশ্য কড়া টক্কর দেওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন। বলা হত, উত্তর কলকাতার রাজনৈতিক মানচিত্র তিনি হাতের তালুর মতোই চেনেন। সংগঠনেও তিনি দক্ষ। তবে, সদ্য দলবদল করা নেতার প্রতি জনতার যে সন্দেহ-সংশয় তাও একই সঙ্গে কাজ করছিল। বিজেপি অবশ্য চেষ্টার কসুর করেনি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাপস রায়ের সমর্থনে এসে শ্যামবাজার থেকে সিমলা স্ট্রিট পর্যন্ত জাঁকজমক রোড শো করেন। তার সমারোহ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ঠিক পরেরদিন একই রুটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড শো দেখিয়ে দিয়েছিল, উপর উপর কলকাতা উত্তরে পদ্ম ফোটার আদর্শ পরিবেশ থাকলেও, ঘাসফুলের দাপটই আলাদা।
ভোটের আগে দলবদল করে পদ্মপ্রার্থী হন একদা তৃণমূলের সৈনিক তাপস রায়।
[আরও পড়ুন: তরুণ তুর্কিতেও কাটল না খরা, বামের আসন শূন্য আজিকে…]
শেষমেশ মোদি-শাহদের উত্তর কলকাতা জেতার স্বপ্নে জল ঢেলে পরাজিত তাপসের ম্লান মুখ বুঝিয়ে দিল, বাংলার মাটি সত্যিই দুর্জয় ঘাঁটি। এর একেবারে বাস্তব প্রতিফলন ঘটল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ে। ৯২ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ। ফলাফল স্পষ্ট হতেই দলনেত্রী সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ''যারা বেইমানি করে, তাদের মানুষ সমর্থন দেয় না।'' চব্বিশের লোকসভা দেখল, কলকাতা উত্তরে মেলালেন সেই মমতা। জেতালেন সেই মমতাই। অতএব কলকাতার 'উত্তর' এবারও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই।