কলহার মুখোপাধ্যায়: জন্মাষ্টমী তিথিতে পুণ্যার্জনের লোভ সামলাতে পারেননি পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই মহিলা। তাই বাইক চড়ে গিয়েছিলেন কচুয়ায়। ভোররাতে মন্দিরে ঢুকতে গিয়েই বিপত্তি। বৃষ্টিতে জলকাদাময় মন্দির চত্বরে পা পিছলে পড়েই মৃত্যু। শেষবারের মতো পুণ্যস্থান দেখেই চলে গেলেন পূর্ণিমা গড়াই। রাজারহাটের বাসিন্দা।
[আরও পড়ুন: ঝগড়া করে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কলকাতায়, বধূকে ঘরে ফেরাল কলকাতা পুলিশ]
রাজারহাটের নাইপুকুরের বাসিন্দা বছর সাতচল্লিশের পূর্ণিমা গড়াই। স্বামী সঞ্জয়কে হারিয়েছেন আগেই। মেয়েকে নিয়ে আপাতত সংসার। বড় ইচ্ছে ছিল, জন্মাষ্টমী পুণ্যতিথিতে একবার কচুয়ায় লোকনাথ ধামে গিয়ে পুজো দেবেন, পুণ্য অর্জন করবেন। মেয়ের কাছে সেকথা প্রকাশ করায় মেয়েও রাজি। ঠিক হল, তাহলে এবছরই হোক সেই পুণ্যস্থানে যাওয়া।
সেইমতো বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েকে নিয়ে মেয়েরই এক বন্ধুর বাইকে চড়ে রাজারহাট থেকে কচুয়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন পূর্ণিমাদেবী। তখন প্রায় মাঝরাত। ভিড় হবে জানতেনই। তাই ভেবেছিলেন, রাতে পৌঁছে পুজো দেওয়ার লাইনে দাঁড়াবেন। ভোরে পুজো দিয়েই ফিরবেন বাড়ি। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই এক মুহূর্তে পালটে গেল সব কিছু। লাইনে দাঁড়িয়ে আচমকা জলবৃষ্টিতে পা পিছলে পড়ে যান পূর্ণিমা দেবী। ভিড়ের মধ্যে সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, উদ্ধারকারী দল। পূর্ণিমা দেবীকে উদ্ধার করে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর মেয়ে এবং মেয়ের বন্ধু আহত হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: কচুয়াধামে নিহত এবং আহতদের পরিবারের পাশে রাজ্য, আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর়]
পূর্ণিমা গড়াইয়ের মতো কচুয়ায় পুজো দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও কয়েকজন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পরিবারের পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রিয়জনকে হারিয়ে কোনওকিছুতেই সান্ত্বনা পাচ্ছেন না কেউ। পুণ্যার্জনের জন্য গিয়ে জীবনটাই যে শেষ হয়ে যাবে, কেই বা ভেবেছিল? পিতৃহীন পূর্ণিমার মেয়েও কি ভাবতে পেরেছিলেন যে মায়ের একটা ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে এমনটা হবে? কিন্তু জীবন এরকমই। বাস্তব কাহিনি কল্পনার চেয়েও আশ্চর্যজনক।
The post মায়ের ইচ্ছাপূরণে গিয়েই মাতৃহীনা! শোকে পাথর কচুয়ায় মৃত পূর্ণিমার মেয়ে appeared first on Sangbad Pratidin.