সুব্রত বিশ্বাস: ম্যানুয়ালি টিকিট সংরক্ষণ ব্যবস্থায় নাজেহাল হতে হত যাত্রীদের। নামেই টিকিট সংরক্ষণ। আদৌ হত কি হত না, তা নিয়ে ছিল দেদার সংশয়। ফেরার টিকিটের কোনও সংরক্ষণই ছিল না প্রায়। থাকলেও কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। যাত্রীদের সুবিধাতেই পাবলিক রিজার্ভেশন সিস্টেম বা পিআরএস সিস্টেম চালু করে রেল। শুরু হয় কমপিউটর চালিত সংরক্ষণ ব্যবস্থা। সে ব্যবস্থারই তিরিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন রেলের।
[ বাণিজ্যিক উড়ানে সবুজ সংকেত পেল ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ডর্নিয়ার ]
আজ টিকিট সংরক্ষণ করা কোনও ব্যাপারই নয়। মাউসের এক ক্লিকেই দেশের যে কোনও প্রান্তে বসে যে কোনও ট্রেনের টিকিট বুক করা যায়। কিন্তু এ জিনিস একদিনে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। গোটা দেশে এত স্টেশন। এতগুলি ট্রেন। সবগুলিকে এক যোগসূত্রে বাঁধা চাট্টিখানি কথা ছিল না। এদিকে ম্যানুয়ালি সংরক্ষণ ব্যবস্থায় হ্যাপা ছিল বড্ড বেশি। অসুবিধা দূর করতে কমপিউটরচালিত ব্যবস্থা রূপায়ণে মন দিয়েছিল রেল।
[ খুলে নেওয়া হয়েছিল কুলভূষণের স্ত্রীর মঙ্গলসূত্র, ফেরত দেওয়া হয়নি জুতোও ]
সংরক্ষিত টিকিট শুরুর দিনগুলি:
১৯৮৫ সালের ১৫ নভেম্বর পিআরএস পাইলট প্রজেক্ট লঞ্চ করে রেল। ইনটিগ্রেটেড মাল্টিপল ট্রেন প্যাসেঞ্জার রিজার্ভেশন সিস্টেম বা IMPRESS চালু করা হয়। অনলাইন ট্রানজাকশনের এই সিস্টেম রেল তৈরি করে কমপিউটর মেনটেনেন্স সিস্টেম বা সিএমসি-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। উদ্দেশ্য ছিল তিনটি। প্রথমত, যে কোনও কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট বুক করা। দুই, ট্রেনের তালিকা তৈরি। এবং সর্বোপরি, টিকিটের থেকে পাওয়া টাকার হিসাব রাখা। কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই ও সেকেন্দ্রাবাদে তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ১৯৮৭ সাল থেকে। প্রথম সংরক্ষিত টিকিট কাটার তারিখটি ছিল ১৭.১১.১৯৮৭। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের হাওড়া থেকে বর্ধমান পর্যন্ত সে টিকিট কাটা হয়েছিল। যার ভাড়া ছিল ১৪ টাকা। যদিও IMPRESS ব্যবস্থায় বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ছিল। যাত্রীদের তুমুল চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিল না সিস্টেম। পরে কিছু সংশোধন এনে চালু করা হয় নতুন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। কান্ট্রি ওয়াইড নেটওয়ার্ক ফর কমপিউটরাইজড এনহ্যান্সড রিজার্ভেশন অ্যান্ড টিকেটিং বা CONCERT নাম আসরে। সেকেন্দ্রাবাদ পিএরআস-এ তা চালু হয়। এরপর আরও উন্নত ও সংশোধিত হয়েছে এই সিস্টেম। বর্তমানে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই, সেকেন্দ্রাবাদ এই চার শহরে পিআরএস সার্বার মেনটেন করা হয়।
[ অ্যাম্বুল্যান্সে গেল মদ, রাশিয়ান সুন্দরীদের তালে নাচলেন ডাক্তাররা! ]
টিকিট রিজার্ভেশনের তিরিশ বছর উপলক্ষে পূর্ব রেলের আয়োজনে হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। কয়লাঘাট বুকিং সেন্টার থেকেই দেশে প্রথম পিআরএস ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। অর্থাৎ কমপিউটরচালিত টিকিট সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এর আগে ম্যানুয়ালি এই কাজ করা হত। তাতে হ্যাপা কম ছিল না। প্রথমত, এক কাউন্টারে টিকিট কেটে অন্য কাউল্টারে রিজার্ভেশন করাতে হত। সংরক্ষণ হয়েছে কিনা তা জানাও বেশ ঝক্কির ছিল। অন্যদিকে ফেরার টিকিটের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের বিরাট ঝামেলা ছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা হয়েও উঠত না। মঙ্গলবার পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে হল তারই সেলিব্রেশন। ৭৫৪টি ট্রেনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। প্রায় ৫৩ লক্ষ যাত্রী এর সুবিধা পান। আর থেকে রেলের আয় হয় প্রায় দৈনিক কুড়ি কোটি টাকা। এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলের প্রাক্তন ফিনান্স কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। এই উপলক্ষে একটি স্যুভেনিয়রও প্রকাশ করে পূর্ব রেল।