স্টাফ রিপোর্টার: এই সেদিনও ছিলেন। আর দেখা নেই। সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের গণ কনভেনশনে দেখা গেল না ডা. সুবর্ণ গোস্বামী, ডা. কুণাল সরকার, ডা. অভিজিৎ চৌধুরী, ডা. নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা দেখেশুনে প্রশ্ন তুলছে নাগরিক সমাজ, কোথায় গেলেন চার মূর্তি? ছাত্রদের আন্দোলনে ধুয়ো দিয়ে কেন তাঁরা উধাও হয়ে গেলেন মাঝপথে? গত ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুতে যখন আন্দোলন শুরু হয়, সবার সামনের সারিতে জ্বলজ্বল করত চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী, সুবর্ণ গোস্বামীর মুখ। ডা. কুণাল সরকার, নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা গরম বক্তৃতা দিতেন। অথচ সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের গণ কনভেনশনে তাঁদের টিকির দেখা মিলল না। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুমে যা নিয়ে জোর গুজগুজ, ফিসফাস। কারও প্রশ্ন, এঁরাই কি জুনিয়রদের ত্যাগ করলেন? নাকি, জুনিয়ররা তাঁদের আমন্ত্রণই করেননি? নাকি আমন্ত্রণ করা সত্ত্বেও তাঁরা বিশেষ কোনও কারণে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
নিজেকে সিপিএম বলে বুক বাজিয়ে সমাজের সর্বত্র পরিচয় দেন ডা. সুবর্ণ গোস্বামী। তিনিই আবার ডাক্তারদের আন্দোলনে নামার সময় হয়ে যান নিরপেক্ষ। এ যাবতকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় সবচেয়ে বড় ‘গ্যাস বেলুন’ তিনিই উড়িয়েছেন। মৃত ডাক্তারের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নাকি ১৫০ গ্রাম সিমেন পাওয়া গিয়েছিল। এই আষাঢ়ে গল্প ডা. সুবর্ণ গোস্বামীর মস্তিষ্কপ্রসূত। একসময় এই বাংলায় ডা. সৌমিত্র বিশ্বাস খুনে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। ফের নতুন করে সেই তদন্ত শুরু হওয়ার আঁচ পেতেই মিছিলের খিড়কির দরজা দিয়ে পালিয়েছেন ডা. সুবর্ণ গোস্বামী। বর্ধমানের এই চিকিৎসক আধিকারিকের বিরুদ্ধে জোর করে টাকা তোলার অভিযোগ উঠতেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সূত্রের খবর, শনিবার আর জি কর চত্বরে তাঁকে নাকি দেখা গিয়েছিল। তবে কনভেনশনে তাঁর দেখা মেলেনি। অন্যদিকে ডা. কুণাল সরকার আন্দোলনের প্রথম দিকে বিরাট উৎসাহ দেখালেও অনশনের সময় থেকে নিজেকে কার্যত গুটিয়ে নিয়েছেন।
স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অনশন করা ঠিক হচ্ছে না। এরপর যে বামপন্থীরা নেপথ্যে এই আন্দোলনের কলকাঠি নাড়ছিলেন, তাঁরা তাঁকে সরিয়ে দিলেন, তিনিও নিজেকে সরিয়ে নিলেন। একই অবস্থা ডা. অভিজিৎ চৌধুরীর। ভীষণ বিপ্লব করার পর এখন যিনি গ্রিন রুমের অন্ধকারে। চিকিৎসক মহলে খবর, সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে তাঁর যুক্ত থাকার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। চিকিৎসকদেরই একটা অংশ বলছেন, আসল সত্য বেরিয়ে পড়ার ভয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁর নিজের ব্যবসার ক্ষতি হওয়ার ভয় তো ছিলই, সেই সঙ্গে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার প্রমাদ গুনেই আজ তিনি পর্দার আড়ালে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
ডা. নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকেই অনশনের বিপক্ষে। প্রকাশ্যে সে কথা জানিয়ে নিজের দল সিপিএমের কাছেই ব্রাত্য। আপাতত এই চার সিনিয়রের অন্তর্ধান রহস্যে ক্রমশ বাড়ছে গুঞ্জন। শনিবার মঞ্চে এবং মঞ্চের নিচে এঁদের দেখা না যেতেই সেই গুঞ্জন আরও বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, “এত বড় নাকি গণ কনভেনশন। সমস্ত পেশার মানুষ নাকি সেখানে, অথচ যে সিনিয়ররা প্রথম থেকে আন্দোলনে ছিলেন, তাঁরা কেন শনিবার আর জি করের গণ কনভেনশনে অনুপস্থিত?” রবিবার শহরে সিনিয়র চিকিৎসক তথা নাগরিক সমাজের একটি মিছিল বের হয়। কলেজ স্ট্রিটের সে মিছিলেও দেখা মেলেনি ওই চার চিকিৎসকের।