২১ জুলাই। ধর্মতলার শহিদ দিবসের মঞ্চ। বৃষ্টিস্নাত কলকাতায় সেদিন আচমকা উত্থান হয়েছিল অনামী এক কন্যার। ঝাঁঝালো বক্তব্যের মধ্য দিয়েই রাজনীতির মঞ্চে আত্মপ্রকাশ ঘটে সোনারপুরের মেয়ের। তারপরেই শুরু বিতর্ক! কেন সকলকে ছাপিয়ে তিনিই সুযোগ পেলেন সেদিন! কী হয়েছিল আসলে? রাজন্যা হালদারের (Rajanya Haldar) প্রেম জীবন থেকে শুরু করে রাজনীতি। স্লোগান চুরির অভিযোগ থেকে দলের অন্দরের কথা। দেবাংশু (Debangshu Bhattacharya), সুদীপদের নিয়ে কী ভাবেন এই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেত্রী? সংবাদ প্রতিদিন– র প্রতিনিধি রমেন দাসের সঙ্গে কথোপকথনে ‘ভাইরাল’ রাজন্যা হালদার।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রভাব কম! এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেখানেই দক্ষিণপন্থী রাজনীতি করতে অসুবিধা হয়নি?
রাজন্যা: না, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেইভাবে অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে পরিনি। কিন্তু একথা সত্যি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (Presidency University TMCP) করতে গিয়ে একাংশের কাছে। অর্থাৎ অতি বামপন্থীদের কাছ থেকে কটাক্ষ এসেছে।
ভয় লাগেনি?
ভয় পাইনি! তবে খানিকটা হেনস্থা করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কী বলুন তো, আমাদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) মানুষ ভালবাসেন। সেখানে তাঁদের সৈনিকদের কেউ আটকাতে পারবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি ভাইরাল! কিন্তু যে বক্তব্যের পর এই জনপ্রিয়তা তা নিয়েও তো বিরাট চর্চা?
রাজন্যা: একদম। আমি কেন সেদিন বক্তব্য রাখলাম ওই মঞ্চে, সেটা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিরন্তর ট্রোল করছেন অনেকেই।
সেদিন আপনার বলা স্লোগান নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। আপনি স্লোগান চুরি করেছেন, এমনও বলা হচ্ছে!
রাজন্যা: আমার দেওয়া স্লোগান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা শুনেই অবাক হচ্ছি। কিন্তু বলব, এবিভিপি (ABVP) আর এসএফআই (SFI) আগে ঠিক করে নিক, আমি কার স্লোগান চুরি করেছি! তারপর বলুক। আর বলব, স্লোগান কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। ওদের কি ফ্রাঞ্চাইজি নেওয়া নাকি ওই স্লোগান, আমি বলতে পারব না!
২১ জুলাইয়ের মঞ্চে উপস্থিত এত নেতা-নেত্রী থাকতেও আপনাকেই কেন দেখা গেল ওই ভূমিকায়?
রাজন্যা: দেখুন, আসলে কী ঘটেছিল তার কারণ কিন্তু অন্য। তা জানতে গেলে আমার বলা উচিত ২১ জুলাইয়ের আগের দিনের কথা। ২০ জুলাই ধর্মতলায় দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আসেন। সেখানে এসে দিদি (CM Mamata Banerjee) বলেন, এবার মঞ্চে নতুনদের সামনের দিকে রাখতে। সেখানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য দাদা আমাকে দিদির কাছে ডাকেন। সেখানে আর একজন নেত্রীও ছিলেন। দিদি বলেন, ‘এই তুই ২১ তারিখ বক্তব্য রাখবি!’ আমি আমার দলের নেত্রীর সেই নির্দেশ পালন করেছি। দলের একজন অনুগত সৈনিক হিসাবে একাজ করেছি।
তারপর?
রাজন্যা: আসলে কী বলুন তো, দিদি মায়ের মতো করে বলেন! যেমন একজন মা তাঁর সন্তানকে বলেন। সেটাই তাঁর কথার মধ্যে ছিল। আমিও নেত্রীর বলা কথা পালন করেছি।
আপনাকে দেখলেই সেলফি তুলতে ভিড়! এই জনপ্রিয়তার পর যদি নিজের দলের একাংশের কাছে গাত্রদাহের কারণ হন আপনি?
রাজন্যা: দেখুন আমি জনপ্রিয় হতে চাইনি কোনও দিন। কিন্তু এখন মানুষ আমাকে দেখে সেলফি তুলতে ভিড় করছেন কিনা জানি না! তবে তাঁরা আমায় আশীর্বাদ করছেন। সংগঠনের কথা বলছেন। এটা আমার দলের নেত্রীর আদর্শের মতো করেই বিরাট পাওয়া। গাত্রদাহ প্রসঙ্গে কাদের কথা বলছেন?
[আরও পড়ুন: কমছে স্বাদ, বাড়ছে বিপদ! ভোজনরসিকদের ‘তাণ্ডবে’ সংকটে ইলিশের ভবিষ্যৎ]
আপনার সমসাময়িক কোনও গোষ্ঠী, বর্তমানের কোনও জনপ্রিয় যুব মুখ। সেক্ষেত্রে যদি এমন টের পান?
রাজন্যা: (খানিকটা থেমে আবার বলতে শুরু করলেন রাজন্যা হালদার) গাত্রদাহ! আমি মনে করি না এমন হতে পারে দলের অন্দরে। আমি বিশ্বাস করি না আমার উত্থানে, আমার সাফল্যে, আমারই দলের অন্যরা কষ্ট পাবেন! কিন্তু…! শুধু বলব, আমাদের দল একটি পরিবারের মতো। সেখানে ঠোকাঠুকি হতে পারে। কিন্তু আদতে আমরা সবাই এক। সকলেই একই পরিবারের সদস্য। এমন তো আমি সব সময় মনে করি। আমি বিশ্বাস করি এটাই।
সোনারপুরের মেয়ে থেকে হঠাৎ কলকাতার রাজনীতিতে পা। কীভাবে এই পথে এলেন?
রাজন্যা: আমার বাড়ি সোনারপুরে। কিন্তু আমার পড়াশোনা। স্কুল জীবন। বাংলা বিষয় নিয়ে পড়া। সবটাই কলকাতায় (Kolkata)। আর রাজনীতিতে আসার কারণ হিসাবে বলতে পারেন আমার পরিবার। আমি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। সেখান থেকেই এই পথে।
ব্যক্তি রাজন্যা আর রাজনীতিক রাজন্যায় ফারাক বোঝেন?
রাজন্যা: তেমন কিছুই নয়। আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালবাসি। যা এখনও করি। আমার দলের নেত্রী এই শিক্ষা দেন আমাদের। সাধারণ মানুষের কথা শোনা, তাঁদের সঙ্গে থাকা। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। প্রায় একই আছি।
[আরও পড়ুন: ভাঙছে মিথ, কার্বলিকে ভয় পায় না সাপ! বাঁধনেই বাড়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা, কী করলে বাঁচবে জীবন? ]
ভবিষ্যতে যদি বড় কোনও সুযোগ আসে, নতুন কোনও লড়াইয়ের মুখ হতে হয়? নির্বাচনে লড়াই করতে হলে?
রাজন্যা: এক্ষেত্রে বলব দিদি আমাকে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বলতে দিয়েছেন, সেটাই আমার কাছে বিরাট পাওয়া। আর টিকিটের কথা বলছেন, নির্বাচনের কথা বলছেন। সবটাই দলের সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। যা দল আমায় বলবে অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
অবসরে কী করেন রাজন্যা?
রাজন্যা: বই পড়ি। গান শুনি। গান গাই আমি। সেখানেই সময় কেটে যায়। পরিবারের সঙ্গে থাকতে ভালবাসি।
রাজন্যার জীবনে প্রচুর ক্রাশ এখন! কিন্তু প্রেম? রাজনীতির কারওর সঙ্গেই নাকি গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন আপনি?
রাজন্যা: (হেসে) প্রেম ছাড়া তো আমরা কেউ-ই থাকি না বলুন! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে (Presidency University) একটা কথার চল আছে থ্রি-পি। পড়াশোনা, প্রেম, পলিটিক্স। প্রেম সবকিছুর সঙ্গে হতে পারে। গান, বই আরও কত কিছু!
এড়িয়ে যাচ্ছেন তার মানে?
রাজন্যা: আমার প্রেম তো আছে, কিন্তু গানের কথায় বলব, আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আকাশে…ধন্যবাদ।
দেখুন ভিডিও: