shono
Advertisement
Calcutta HC

IAS'র স্ত্রীর কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ! পুলিশি তদন্তে 'গাফিলতি' নিয়ে কড়া হাই কোর্ট

অভিযুক্তর জামিন খারিজ করে গ্রেপ্তারির নির্দেশ হাই কোর্টের।
Published By: Paramita PaulPosted: 06:15 PM Sep 28, 2024Updated: 08:36 PM Sep 28, 2024

গোবিন্দ রায়: ভিনরাজ্যে কর্মরত এক আইএএস কর্তার স্ত্রীকে ধর্ষণের তদন্তে গাফিলতি ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে কড়া পদক্ষেপ করল কলকাতা হাই কোর্ট। লেক থানার ওই ঘটনার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, তদন্তকারী অফিসার-সহ একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। অভিযোগ, অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় মহিলাকে না জানিয়েই মামলা লঘু করে দেওয়া হয়। তার জেরে জামিনও পেয়ে যান অভিযুক্ত। ওই অভিযুক্তর জামিন খারিজ করে অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার ও একজন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

ওই মহিলা একজন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। যৌন-নির্যাতনের মত গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিকভাবে লঘু ধারায় এফআইআর হওয়ার ফলে মামলা দুর্বল হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের। তিনি বলেন, "প্রাথমিকভাবে সঠিক ধারায় এফআইআর দায়ের না হওয়া এবং অভিযোগপত্র বিকৃত করার যে অভিযোগ উঠছে তার ফলে এই তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।" আদালতের মতে, "অভিযুক্তের পরিবার নিগৃহীতাকে থানায় বসে হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি। এছাড়াও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নিগৃহীতা মহিলার শারীরিক পরীক্ষাও করেনি পুলিশ।"

আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, গ্রেপ্তারির পরেই নিম্ন আদালতে পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে জামিন পান অভিযুক্ত। পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁর আগাম জামিনও মঞ্জুর করে আদালত। তাই নিম্ন আদালত থেকে পাওয়া জামিন এবং আগাম জামিন খারিজ করেছে হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, লালবাজারে কর্মরত ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক মহিলা পুলিশ আধিকারিককে মামলা হস্তান্তর করা হবে। তিনি এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক হবেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে লেক থানার ওসি, এক সাব ইন্সপেক্টর, একজন সার্জেন্ট এবং তিন মহিলা পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে কক্ষেপ করার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 

ঘটনাটি চলতি বছরের ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের। অভিযোগ, ১৪ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এবং ১৫ জুলাই ভোর সাড়ে ৬ টা নাগাদ নিগৃহীতা মহিলার বাড়িতে ঢুকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। সেদিন বিকাল ৪টে ১৫ মিনিটে মহিলা লেক থানায় পৌঁছলেও এফআইআর গ্রহণ না করে দীর্ঘক্ষণ তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ।

এমনকি লঘু ধারায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি, পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য অভিযুক্তের স্ত্রী এবং ছেলে চাপ দেয় বলে অভিযোগ। এফআইআর দায়ের করার পরেই অভিযুক্তের স্ত্রী এবং ছেলেকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। নিগৃহীতাকে চাপ দেওয়ার জন্যই এদের নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ। নিগৃহীতার দাবি, ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে তাঁর জামা-কাপড় এবং অন্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে বাড়িতে যায় পুলিশ। অভিযুক্ত বাড়িতে ঢুকছে এবং বেরচ্ছে, সেই সিসিটিভি ফুটেজ নিতে পুলিশ অস্বীকার করে বলে দাবি মামলায়। অভিযোগ, নিগৃহীতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করেননি তদন্তকারী আধিকারিক। নিগৃহীতা নিজেই সরকারি হাসপাতালে যান এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট তদন্তকারী আধিকারিককে দেন বলে জানানো হয়েছে।

রাজ্যের দাবি, ১৫ জুলাই দুপুর ২টো ১৫ নাগাদ নিগৃহীতা মহিলা লেক থানায় যান। লিখিত অভিযোগ দাখিল করার পর তিনি তাঁর বন্ধুর মোবাইল থেকে থানায় উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের হোয়াটস্যাপ মেসেজ মারফত অভিযোগ করেন। রাজ্যের আরও দাবি, থানায় উপস্থিত একজন মহিলা পুলিশ কর্মী তাঁর মৌখিক বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিং করেন। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের বয়ান এবং মৌখিক বয়ানের মধ্যে পার্থক্য থাকায় তাঁকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিগৃহীতা মহিলা। তার ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। রাজ্যের দাবি, ১৫ জুলাই লেক থানায় কোনও মহিলা তদন্তকারী আধিকারিক উপস্থিত না থাকায় কড়েয়া থানা থেকে একজন মহিলা আধিকারিককে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি ১৬ জুলাই লেক থানায় আসেন এবং নিগৃহীত মহিলার বয়ান ভিডিও রেকর্ডিং করেন। সেই সময় নিগৃহীত মহিলা মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেননি। রাজ্যের আরও দাবি, নিগৃহীত মহিলা নিজে থেকে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়েছিলেন এবং যে রিপোর্ট পুলিশকে দিয়েছিলেন সেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের উল্লেখ থাকলেও কোথাও কোনও রক্তক্ষরণের কথা ছিল না। রাজ্যের দাবি, মেডিক্যাল রিপোর্টে কোথাও ধর্ষণের স্বপক্ষে প্রমাণ মেলেনি। যে অভিযোগ করা হচ্ছে তার প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভিনরাজ্যে কর্মরত এক আইএএস কর্তার স্ত্রীকে ধর্ষণের তদন্তে গাফিলতি ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে কড়া পদক্ষেপ করল কলকাতা হাই কোর্ট।
  • অভিযোগ, অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় মহিলাকে না জানিয়েই মামলা লঘু করে দেওয়া হয়।
  • তার জেরে জামিনও পেয়ে যান অভিযুক্ত।
Advertisement