স্টাফ রিপোর্টার: পাইপ যাওয়া মানেই জল সরবরাহ নয়। জল সত্যি পৌঁছচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট পানীয় জলের লাইন যাচাই করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "অনেক অভিযোগ আছে। অনেক জায়গায় পাইপ গিয়েছে, জল যায়নি। আসলে মাটি পরীক্ষা না করেই ডিপিআর হয়েছে। অনেক জায়গায় জলের উৎস পাওয়া যায়নি।’’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দায়িত্ব দিয়ে বলেন, ‘‘আগামী সোমবারের মধ্যে কথা বলে এই সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে। ডিএম, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, এসডিও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজটা করতে হবে। জলের গুণমান দেখতে হবে। প্রয়োজনে দূর থেকে পাইপ লাগিয়ে জলের উৎসের সঙ্গে লাইন জুড়তে হবে।’’
বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নিয়ে মঙ্গলবার নবান্নে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মন্ত্রী ও সচিবরা। সেখানেই জলের লাইন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। কয়েকদিন আগেই গ্রামীণ এলাকায় কয়েকজন ঠিকাদারের ভুল ডিপিআরের জন্য জলের সংযোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনও সেই প্রসঙ্গ বারবার টেনে আনেন। বলেন, ‘‘যে সব ঠিকাদাররা মাটি পরীক্ষা না করে ডিপিআর করে দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এসটিএফ ব্যবস্থা নেবে। ডিজির নেতৃত্বে হবে। অভিযুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জলের উৎস নেই এমন জায়গায় সমীক্ষা না করে কেন পাইপ বসানো হয়েছে? তদন্তে দোষী প্রমাণ হলে শাস্তি মিলবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘৭৫ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় ও ৭৩ শতাংশ পুরসভা এলাকায় জল পৌঁছে গিয়েছে, বলা হচ্ছে। নিশ্চয়ই অনেক জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু অনেক জায়গায় পৌঁছয়নি। তালিকা আবার ভেরিফাই করতে বলছি।’’
এদিন সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় পাইপ কেটে কেউ কেউ বাড়িতে রিজার্ভার বানিয়ে নিচ্ছে। কেউ আবার চাষের জমিতে জল দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সাবধানবাণী, ‘‘পানীয় জলের পাইপ কেটে কেউ যদি এই কাজগুলি করে থাকেন, তাহলে অবিলম্বে সেগুলি সিল করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ পাইপ কাটার জন্য যেকোনও সময় বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে। জল পাওয়া থেকে বহু মানুষ বঞ্চিত হতে পারে।’’ অনেক জায়গায় পাইপ বসাতে কেউ কেউ বাধা দিচ্ছেন। এঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এদিন ডিজিকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কেউ ছাড় পাবে না। জল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেউ বাধা দিতে পারে না। জলের জন্য ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৫৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। আরও ৬৬ হাজার কোটি টাকা আমাদের হাতে আছে। এখনও অনেক মানুষের বাড়িতে জল পৌঁছনো বাকি।’’
প্রসঙ্গত, আগামী এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষের বাড়িতে জল পৌঁছনোর টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৯৩ লক্ষের মতো জলের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে এই সংযোগগুলির মধ্যেও যে ‘জল’ মিশে আছে, তা এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেন। জানিয়ে দেন, মুখ্যসচিব নিজে মনিটরিং করবে । ডিজি সঙ্গে থাকবে। গ্রুপ অফ মিনিস্টারস থাকবে। অর্থ, ভূমি, সেচ, পঞ্চায়েত দপ্তর থাকবে।