সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সুপ্রিম 'জাজমেন্ট' মানবিকতার খাতিরে মানতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জেরে আদালত অবমাননার নোটিস পাঠালেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, চাকরিহারাদের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী যে পদক্ষেপ করছেন তা বিলম্বিত করার জন্যই এই নিত্যনতুন নোটিস, আইনি জটিলতা তৈরির চেষ্টা। চাকরিপ্রার্থীদের এই ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকার আরজিও জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৫৭২ জনের। এই রায়ের প্রেক্ষিতে ‘অযোগ্য’দের ফেরত দিতে হবে বেতনও। মানবিকতার খাতিরে এই রায় মানতে পারছেন না বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান আছে। সমস্ত বিচারপতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা প্রত্যেককে সম্মান করি। দয়া করে আমার মন্তব্য বিকৃত করবেন না।” রায়ের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এমন সরাসরি মন্তব্য আদালত অবমাননা করেছে বলে দাবি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্তের। তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন ওই আইনজীবী। সিদ্ধার্থের কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী আদালত অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী এবং নবান্নে আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে।"
এর প্রেক্ষিতে এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, "সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা-অশিক্ষক কর্মীর চাকরি চলে গিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার নোটিস দিয়েছেন এক আইনজীবী। আমরা খুব স্পষ্টভাবে তিনটে কথা বলতে চাই, এক-এদের চাকরির সুরক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী যে পদক্ষেপ করছেন, যে প্রক্রিয়া করছেন, সেই প্রক্রিয়াকে আইনি জটিলতা তৈরি করে আটকে দেওয়ার জন্য এই ধরনের নতুন নোটিস পাঠানো বা আইনি জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে। এটা একটা প্রক্রিয়া যাতে মুখ্যমন্ত্রী এদের চাকরি সুরক্ষিত রাখতে যে প্রক্রিয়া নিচ্ছেন তাতে আইনি জটিলতা তৈরি করা যায়। তাই চাকরিহারাদের অনুরোধ করব, দয়া করে এই ষড়যন্ত্রের দিকে নজর রাখবেন। মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের স্বার্থে যে প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চাইছেন এরা এইসব আইনি নোটিস, ষড়যন্ত্রের পথে হেঁটে গোটা প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। দুই, রাম-বাম যারা ভোটে পারে না তারা কোর্টে জটিলতা তৈরি করে। তিন, মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ ভরসা-আস্থা রাখেন, বিচারপতিদের সম্মান করেন। কিন্তু কোনও রায় যদি প্রচুর সংখ্যক মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী হয়, তাহলে তার পুনর্বিবেচনার দাবি তোলাটা স্বাভাবিক। তার সঙ্গে আদালত অবমাননার কোনও যোগ নেই।" একইসঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতিদের একাংশকে বিঁধে তিনি বলেন, "বিচারপতিদের মনে রাখা উচিত, বিচার করতে করতে বিচারপতির চেয়ার ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হতে গেলে বরং সাধারণ মানুষের মনে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।"