অভিরূপ দাস: আমেরিকান উপন্যাসিক মার্ক টোয়েন যে হোটেলে দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। অবিভক্ত রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিকোলাই বুলগানিন পরে গিয়েছিলেন যার প্রেমে। তিলোত্তমার সেই ঐতিহাসিক পাঁচতারা হোটেলে শুরু হল কোভিড চিকিৎসা। সৌজন্যে পূর্ব ভারতের অন্যতম বেসরকারি হাসপাতাল আমরি।
গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল বা অধুনা ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কলকাতার (Kolkata) দ্বিতীয় প্রাচীনতম পান্থশালা। ব্রিটিশরাই কলকাতায় সর্বপ্রথম আধুনিক হোটেলের সূচনা করেছিলেন। ১৮৩০ সালে সাধারণের জন্য দরজা খুলেছিল জন স্পেন্সেস হোটেল। এর ঠিক ১১ বছর পর ১৮৪১ সালে সাধারণের জন্য খুলে যায় গ্রেট ইস্টার্ন। প্রাথমিক অবস্থায় যার নাম ছিল অকল্যান্ড হোটেল। বুধবার থেকে সেটাই করোনার স্যাটেলাইট সেন্টার। করোনার প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে রাজ্যে। ফুরিয়ে আসছে বেড। অবস্থা সামাল দিতে স্যাটেলাইট সেন্টার গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বেডের চাহিদা পূরণ করতে সরকারি পরিকাঠামোয় বেসরকারি উদ্যোগেই কাজ করবে এই সেন্টার। এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর।
[আরও পড়ুন: ‘বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করান, প্রয়োজনে জমি দেবে রাজ্য’, মোদিকে চিঠি মমতার]
জানা গিয়েছে, এই স্যাটেলাইট সেন্টারে চুক্তির মেয়াদ ন্যূনতম তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। চুক্তির সর্বোচ্চ মেয়াদ ১ বছর। স্যাটেলাইট সেন্টারে কর্মী নিয়োগ, পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করতে হবে বেসরকারি সংস্থাগুলিকেই। এই শর্তেই গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে স্যাটেলাইট সেন্টার খুলল আমরি হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই বিলাসবহুল হোটেলের ২০০ বেডে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরের ১২ টি করে ডাবল বেড, এবং ১৩ টি করে সিঙ্গল বেডে চলবে চিকিৎসা। ঝা চকচকে এই হোটেলের কোভিড চিকিৎসার ডাবল বেডের ভাড়া ছ’হাজার। এবং সিঙ্গল বেডের ভাড়া ১০ হাজার টাকা। পাওয়া যাবে ২৪ ঘন্টার ডাক্তার, নার্স। প্রতিটি বেডের সঙ্গে রয়েছে অ্যাটাচ পেশেন্ট মনিটরিং সিস্টেম। রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন, রক্তচাপ দেখে নেওয়া হবে মনিটরে। প্রতিটি রোগীর জন্য থাকবে আলাদা ডেটাবেস। প্রতিমুহূর্তের স্যাচুরেশন রিডিং সেখানে জমা হতে থাকবে।
এখানেই শেষ নয়, ডিসইনফেক্টিং স্প্রে গান দিয়ে নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হবে রোগীর কেবিন। শহরের এই অভিজাত হোটেলে করোনার এহেন বিলাসবহুল চিকিৎসা শুরু হওয়ায় খুশি বাসিন্দারা। দেশের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে গ্রেট ইস্টার্নের নাম। সারা দেশ এই হোটেলকে চেনে “প্রাচ্যের রত্ন” নামে। পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলনের সময় হোটেলটি জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছিল। পরে রাজ্য সরকার এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০৫ সালে এটি একটি প্রাইভেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয় এবং আমূল সংস্কারের পর ২০১৩ সালের নভেম্বরে পুনরায় চালু হয় গ্রেট ইস্টার্ন। এমন বিলাসবহুল হোটেলে রোগী আসবে? সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তিনজন রোগী ভরতি হয়ে গিয়েছেন ললিত গ্রেট ইস্টার্নের কোভিড স্যাটেলাইট সেন্টারে। চিকিৎসকরা বলছেন, পাঁচতারা এই হোটেলের বারান্দায় দাড়ালে এমনিই মন ভাল হয়ে যাবে করোনা রোগীর।