অর্ণব আইচ: পুজোর সময় মণ্ডপের ভিতর যেন একসঙ্গে কুড়ি জনের বেশি দর্শনার্থী না থাকেন। পুজো উদ্যোক্তাদের এই পরামর্শ দিলেন লালবাজারের কর্তারা। করোনা পরিস্থিতিতে পুজো উদ্যোক্তারা সরকারি বিধি মানছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার কলকাতার কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা (Anuj Sharma)। পুজোয় ঠাকুর দেখার লাইনে যাতে পারস্পরিক দূরত্ব (Social distance) বজায় থাকে, তার জন্য মানুষের সচেতনতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে এই নিয়ে বৈঠকে বিভিন্ন থানার আধিকারিকদের নিজেদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।
লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, পুজোয় (Durga Puja) পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে পারেন, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে এই নিয়ে বৈঠকে থানার আধিকারিকদের এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিতে পারেন লালবাজারে কর্তারা। এর আগে পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে থানার আধিকারিক থেকে শুরু করে ডিভিশনের পুলিশকর্তারা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকগুলিতে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, মণ্ডপের ভিতর যাতে একসঙ্গে যেন ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি দর্শনার্থী না থাকেন। প্রবেশ ও প্রস্থান পথে আলাদা করতে হবে। ভিড় হলে সামাল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক যাতে মণ্ডপে থাকেন, উদ্যোক্তাদের সেই পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। উদ্যোক্তারাও রাজি হয়েছেন পুলিশের প্রস্তাবে।
[আরও পড়ুন: ‘দুর্গাপুজো ঘরে বসে হয় না’, উৎসব নিয়ে বিতর্কের মাঝেই জবাব মুখ্যমন্ত্রীর]
এদিন মণ্ডপ পরিদর্শন করার সময়ও লালবাজারের কর্তারা আরও একটি বিষয় নজরে আনেন। কতটা দূর থেকে দর্শনার্থীরা ঠাকুর দেখতে পাবেন, সেই তা খতিয়ে দেখা হয়। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নিজে কলকাতার ৬টি জনপ্রিয় (Crowd Puller) মণ্ডপ পরিদর্শন করেন, এই মণ্ডপগুলিতে বেশি ভিড় হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিশেষ পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম ও অন্য পুলিশকর্তারা। পুলিশ কমিশনার প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে যান। পার্কের পিছনের গেট দিয়ে ঢুকে মণ্ডপ পরিদর্শন করেন তিনি ও অন্য পুলিশকর্তারা। যে বাঁশের ব্যারিকেড পেরিয়ে দর্শনার্থীরা ঠাকুর দেখতে আসবেন, সেটিও দেখেন তিনি। সেখান থেকে তিনি চলে যান চেতলা অগ্রণীতে। এখানে দূর থেকেই দর্শনার্থীরা প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া রিজেন্ট পার্কে, মায়ের পচাগলা দেহের পাশেই ঘুমোলেন প্রৌঢ়!]
পুলিশ কমিশনারের পরের গন্তব্য ছিল নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ। সেখানকার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে তিনি যান নাকতলা উদয়ন সংঘে। এরপর পুলিশ কমিশনার ও অন্য পুলিশকর্তারা মধ্য কলকাতার মহম্মদ আলি পার্ক ও উত্তর কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার সর্বজনীনের মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। মণ্ডপ কতটা খোলামেলা রেখে পুজো হচ্ছে, পুরো বিষয়টি নিজে খতিয়ে দেখেন অনুজ শর্মা। মণ্ডপ চত্বরে দাঁড়িয়েই উদ্যোক্তা ও সহকর্মীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা সেরে নেন। মহম্মদ আলি পার্ক অথবা কলেজ স্কোয়্যারের মতো মণ্ডপগুলিতে প্রত্যেক বছরই দর্শনার্থীরা লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এভাবে চললে সমস্যা হতে পারে। পুলিশ কমিশনার জানান, এই বছরটি অন্যান্য বছরের থেকে আলাদা। এবার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সুষ্ঠুভাবে পুজো সম্পন্ন করাটাই পুলিশ, পুজো উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ অথবা দর্শনার্থীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
অনুজ শর্মা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার যা বিধি তৈরি করেছে, তা ভালভাবেই পুজো উদ্যোক্তারা মানছেন। চারপাশ খোলা রেখেই মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। গেটগুলি এমনভাবে রয়েছে, যাতে একদিক থেকে প্রবেশ করে অন্যদিকে বের হওয়া যায়। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। মণ্ডপ স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকছে। মণ্ডপ থেকে পুজো উদ্যোক্তারাও মাস্ক বিতরণ করবেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। পুজোর সময় যাতে শহরে যান চলাচল মসৃণ থাকে, তার জন্য এখন থেকেই ট্রাফিক টিম তৈরি রয়েছে।