অভিরূপ দাস: বাঁ চোখের ভিতরে আড়াআড়ি ঢুকে ঝুলছে গোঁফ ছাটার কাঁচি! মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়ে বাচ্চা। রক্তে মুখ মাখামাখি। রক্ত লেগে মায়ের আঁচলেও। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ এসএসকেএমের (SSKM) ট্রমা কেয়ার সেন্টারে প্রায় দু’বছরের খুদে শেখ মিখাইলকে দেখে আঁতকে উঠেছিলেন চিকিৎসরা। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচারে জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দু’ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর দু’দিন আইসিইউ-তে (ICU) থাকার পর সোমবার বিকেলে দিব্যি মায়ের কোলে হাত-পা নেড়ে খেলছে।
হাওড়ার (Howrah) মুন্সিরহাটের নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা শেখ আরিফ আলির একমাত্র ছেলে শেখ মিখাইল। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘরের ভিতরে খেলছিল ১ বছর ১০ মাসের মিখাইল। কখনও খাটের পায়া ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা। আবার কখনও হামাগুড়ি দিচ্ছিল। একটু দূরে বসে নাতির কাণ্ড দেখছিলেন রজব আলি। একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলেন। আচমকা চিলচিৎকার। ঘাড় ঘুরিয়ে রজব দেখেন, খাটের পাশে প্লাস্টিকের ঝুড়ির মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে রয়েছে নাতি। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরচ্ছে। কোলে তুলে ধরতেই দেখেন বাঁ চোখের মণির পাশ দিয়ে আড়াআড়ি ঢুকে গিয়েছে গোঁফ ছাঁটার কাঁচি (Scissor)।
[আরও পড়ুন: ‘একটা প্রতিষ্ঠান শুধু টার্গেট হতে পারে না’, যাদবপুরের পাশে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক শ্রীলেখা!]
হতচকিত মিখাইলের মা ছেলে কোলে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে ছুটতে থাকেন। ছেলের বউকে আর নাতিকে নিয়ে রজব প্রথমে যান জগৎবল্লভপুর হাসপাতালে। শিশুর এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে ঝুঁকি নেননি জগৎবল্লভপুরের চিকিৎসকরা। রেফার করেন SSKM হাসপাতালে। ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রাউন্ড দিয়ে বেরচ্ছিলেন নিউরো সার্জারির বিভাগীয় প্রধান ডা. শুভাশিস ঘোষ। বাচ্চাটিকে দেখে বুঝে যান চোখের ভিতর দিয়ে কপালের সামনের অংশ(ফ্রন্টাল অরবিট) ফাটিয়ে কাঁচির সামনের অংশ ঢুকে গিয়েছে। সি টি স্ক্যানেও (C T Scan) একই রিপোর্ট আসে।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নয়’, ভারতের ঘোষণার পরই সাফাই চিনের]
সোমবার বিকেলে শুভাশিসবাবু বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত ঝুঁকি ছিল। তবে কপালের সামনের হাড় ফাটলেও কাঁচি বের করা হয়েছে। নার্ভের কোনও ক্ষতি হয়নি। চোখের ডাক্তারও পরীক্ষা করেছেন। চোখের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। আরও কয়েকবার চোখ পরীক্ষা হবে। তবে বাচ্চাটি বিপন্মুক্ত।’’ ট্রমা কেয়ারের বাইরে দাঁড়িয়ে রজব আলি বলেছিলেন,‘‘বড় বিপদ থেকে বেঁচে ফিরল নাতি। ডাক্তারবাবুদের ঋণ শোধ করার নয়।’’