অর্ণব আইচ: একদিকে সুন্দরবনে বাঘের হুঙ্কার, অন্যদিকে পুলিশের তাড়া। শেষ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে পুলিশের হাতেই ধরা দিল পলাতক অভিযুক্ত। নাবালককে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ছিল এক নাচের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারি এড়াতে কলকাতা থেকে পালিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনে। কিন্তু পুলিশের তাড়া খেয়ে শেষমেশ সুন্দরবন থেকে সোজা কলকাতায় ফিরে আসে। দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের গোপালনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হল অলোক ঘরামি ওরফে অলোক দে নামে ওই ব্যক্তিকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় কিশোর, কিশোরীদের নাচ শেখাত শিক্ষক অলোক। লেক এলাকার গোবিন্দপুর রোডের বাসিন্দা অলোক ওই অঞ্চলেরই একটি জায়গায় নাচ শেখানোর সময় দশ বছরের বালককে ‘টার্গেট’ করে। অভিযোগ, অলোক ওই নাবালক ছাত্রকে নিজের এক বান্ধবীর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেই তার যৌন নিগ্রহ করে। এখানে শেষ নয়। পরবর্তী সময়ে যৌন নিগ্রহের জন্য ওই ছাত্রকে অলোক বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। একইসঙ্গে সে হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ।
এসব ঘটনার জেরে বাড়িতে ফেরার পর থেকে আতঙ্কে ছিল ওই নাবালক। বেশ কিছুদিন ধরে ছেলের মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখে মায়ের সন্দেহ হয়। তিনি বার বার জিজ্ঞাসা করার পর ওই নাবালক ভেঙে পড়ে পুরো ঘটনাটি মাকে জানায়। তিনি দক্ষিণ কলকাতার লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পকসোয় মামলা দায়ের হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু বেগতিক বুঝে কলকাতা থেকে পালায় অলোক। বন্ধ করে দেয় মোবাইল। শুধু মাঝেমধ্যে মোবাইল থেকে টাকার লেনদেন করতে থাকে সে। অলোক তার কুকুর এক মহিলাকে রাখতে দেয়। সেই কারণে তাঁকে টাকা পাঠায় সে। ওই লেনদেনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে যে, সুন্দরবন এলাকায় পরিচিতদের বাড়িতে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। সুন্দরবন অঞ্চলে পৌঁছে যায় পুলিশ। কিন্তু এক বা দুদিনের বেশি কোথাও থাকেনি অলোক।
সম্প্রতি তার পরিচিত নাচের একটি দল সুন্দরবনের সজনেখালিতে পৌঁছে যায়। ওই টিমের সঙ্গে সজনেখালিতেও কয়েকদিন গিয়ে থাকে অলোক। পরে সে পুলিশকে জানায়, সুন্দরবনের বাঘের জঙ্গলের কাছে গ্রামে থাকার সময় একাধিকবার বাঘের হুঙ্কার শুনতে পেয়েছিল। সেই আতঙ্কে রাতে ঘুমোতেই পারত না। অলোক জানত, পুলিশ তাকে খুঁজছে। তাই ভেবেচিন্তে বাঘের থাবার চেয়ে পুলিশের হাতে দেওয়াই শ্রেয় বলে মেনে নেয় সে। শেষে পুলিশের তাড়া খেয়ে কলকাতায় পালিয়ে আসে। গোপালনগর থেকে গ্রেপ্তার হয়।