ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রোগী করোনা সংক্রমণের বাহক হলে রোগ ছড়াবে চিকিৎসকদের মধ্যেও। তাই সার্জেনরা গায়ে চড়াবেন প্রোটেক্টিভ স্টেরিলাইজড পোশাক। আর অ্যানাস্থেটিস্টদের জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা। তাঁদের জন্য থাকছে সম্পূর্ণ পিপিই (PPE)। কারণ রোগীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক এবং নল তারাই পরিয়ে দেন। রোগীর নাক মুখ থেকে যে ড্রপলেট বেরোয় তার সংস্পর্শে সরাসরি থাকেন অ্যানাস্থেসিস্টরা। তাই তাঁদের জন্য থাকছে দ্বিস্তরীয় গ্লাভস আর মাস্ক। প্রথমে থ্রি লেয়ার এবং বাইরে সার্জিক্যাল। তবে অস্ত্রোপচারের সময় করোনা সতর্কতা নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে পথিকৃতের ভূমিকা নিল এসএসকেএম হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ নিয়ম করেছে এবার থেকে অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে করোনা সতর্কতা নিয়ে তবেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হবে। হু-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, যার পোশাকি নাম কোভিড ১৯ প্রটোকল (COVID-19 Protocol) । এসএসকেএম হাসপাতালের মতো এই নিয়ম ধীরে ধীরে চালু করে ফেলবে বাকি সরকারি হাসপাতালগুলিও। এখন শুধু অপেক্ষা পর্যাপ্ত স্টেরিলাইজড পোশাকের।
এই মুহূর্তে সরকারি হাসপাতালগুলিতে অন্য রোগীর চাপ কম। প্রধান কারণ এই হাসপাতালগুলির অ্যানেক্স বিল্ডিং করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিণত করা। দ্বিতীয়ত, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রয়েছে যানবাহনের সমস্যা। ফলে আপৎকালীন পরিষেবা ছাড়া কোনও রোগীকেই আর হাসপাতালে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে শয্যা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তাই হাতে সময় নিয়ে রোগীর অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব হচ্ছে। তবে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম চালু করে দেওয়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, “এখন যা অস্ত্রোপচার হচ্ছে সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে এতদিন আমরা যে পোশাক পরতাম এখন তার থেকে আরও বেশি পোশাক গায়ে চাপাতে হচ্ছে।” আগে শুধু সার্জিক্যাল পরলেই চলত। কিন্তু এখন প্রথমে থ্রি লেয়ার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তার উপর সার্জিকাল মাস্ক। চোখ ঢাকার জন্য আগে যে গ্লাস দেওয়া হতো এখন তার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে একটি গ্লাভস পড়লেই চলত। এখন আরও একটি বেশি পড়তে হচ্ছে। অস্ত্রোপচার শেষে ব্যবহৃত গ্লাভস সাধারণ বিনব্যাগে ফেলে দিলেই হত। এখন সেগুলি আলাদা করে রাখতে হচ্ছে। এছাড়া রোগীকে অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও বাড়তি সাবধানতার কথা বলা হয়েছে। তার প্রধান কারণ রোগীর মুখ থেকে থুতু, লালা এসব বেরোলে সবার প্রথম তার সংস্পর্শে আসবেন অ্যানাস্থেসিস্ট। তাই তাঁর জন্য পিপিই রাখা থাকছে। সেই পোশাক পরেই কাজে হাত দেবেন তিনি।
[আরও পড়ুন:করোনা পজিটিভ ওষুধ ব্যবসায়ী, বাগরি মার্কেটে ব্যাপক আতঙ্ক]
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কারণেই ছাড় নেই চিকিৎসকদেরও। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে তো বটেই, এসএসকেএমের সেন্টারে প্রবেশের আগেও চিকিৎসকরা থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষায় উৎরানোর পরই ছাড়পত্র পাচ্ছেন। সঙ্গে স্যানিটাইজারের ব্যবহার তো আছেই। চিকিৎসকদের কথায়, এটা করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিধিসম্মত প্রটোকল। এই প্রটোকল মেনেই অস্ত্রোপচার করতে হবে। আউটডোর ইমারজেন্সিতে পিপিই ব্যবহারের নিয়ম যেমন আগেই চালু হয়ে গিয়েছে। এবার অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও চালু হল এই নিয়ম।
[আরও পড়ুন:‘তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তুললে ভয়াবহ পরিণাম হবে’, সতর্কবার্তা দিল WHO]
The post সংক্রমণ রুখতে কড়া নিদান, অস্ত্রোপচারেও ডাক্তারদের পরতে হবে করোনা বর্ম appeared first on Sangbad Pratidin.
