অর্ণব আইচ: ডিজিটাল গ্রেপ্তারির তদন্ত শুরু করে এই রাজ্যে চারশো 'মিটল অ্যাকাউন্ট' বা ভুয়ো ভাড়ার অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই মিউল অ্যাকাউন্টগুলি তৈরির জন্য দুই অভিযুক্ত চিরাগ কাপুর ও যোগেশ দুয়ার চক্রটি প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করেছিল, এমন তথ্য উঠে এসেছে ইডির গোয়েন্দাদের হাতে। শুধু ডিজিটাল অ্যারেস্টই নয়, অন্যান্য গদ্ধতিতেও সারা দেশজুড়ে চিরাগ ও যোগেশের চক্রটি সাইবার জালিয়াতির জাল ছড়িয়েছিল, এমনটাই জেনেছেন ইডির গোয়েন্দারা।

মঙ্গলবার চিরাগ কাপুর ও যোগেশ দুয়াকে আদালতে তোলা হলে তাদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পরে তাদের ফের ইডি নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে। ডিজিটাল গ্রেপ্তারির তদন্ত শুরু করে চক্রের ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছিলেন লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা। এই চক্রের এক মাথা চিরাগ কাপুরকে বেঙ্গালুরু ও যোগেশ দুয়াকে দিল্লি থেকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
চিরাগ, যোগেশদের বিরুদ্ধে গ্যাগ্রিন থানা এলাকায় এক বৃদ্ধাকে ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে ৪৭ লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়াও কলকাতায় আরও একটি ও আসানসোলের অন্য সাইবর জালিয়াতিতে অভিযুক্ত তারা। সম্প্রতি জেলবন্দি চিরাগ কাপুর ও যোগেশ দুয়াকে নিজেদের হেফাজতে রেখে জের করে ইডি। তদন্তে গোয়েন্দারা এখনও পর্যন্ত এই চক্রটির বিরুদ্ধে সারা দেশজুড়ে ১৮৩টি অভিযোগ পেয়েছেন। যদিও কলকাতা পুলিশের নাবি, এদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ১৩০টি অভিযোগ রয়েছে। তারা সাইবার জালিয়াতির ক্ষেত্রে ভাড়ার অ্যাকাউন্ট বা মিউল অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য বেছে নেয় এই রাজাকেই। এজেন্ট মারফৎ কলকাতা ও আশপাশের জেলার শতাধিক ব্যক্তিকে টোপ দেওয়া হয়। বলা হয়, শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুললেই হাতে হাতে দেওয়া হবে ৭০ হাজার টাকা। শুধু ওই বাক্তিটিকে এজেন্টের সঙ্গে ব্যাঙ্কে যেতে হবে।
আর ওই ব্যক্তির নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার পর এটিএম কার্ড থেকে শুরু করে চেক ও যাবতীয় নথি সেই এজেন্টের হাতে দিতে হবে। তা হলেই মিলবে ৭০ হাজার টাকা। এভাবে বহু মানুষকে টোপ দিয়ে রাজ্যে প্রায় ৪০০ ভুয়া বা মিউল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সারা দেশ থেকে সাইবার জালিয়াতির প্রায় দু'শো কোটি টাকার লেনদেন হয় এই ভুয়ো অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমেই। ইডির সূত্র জানিয়েছে, শুধু ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়েই সাইবার জালিয়াতি করত না চিরাগ ও যোগেশের চক্রটি। আরও বেশ কয়েক ধরনের সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে তারা বিপুল টাকা হাতিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে টাওয়ার বসানো। এই রাজা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দাদের নিজেদের মোবাইল সংস্থার আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ফোন করত। মোবাইলের টাওয়ার বসালেই বিপুল টাকা ও চাকরি দেওয়া হবে বলে টোপ দেওয়া হত।