সুদীপ রায়চৌধুরী: মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে খসড়া ভোটার তালিকা। ‘সময়’ মানার ক্ষেত্রে 'নিখুঁত' থাকলেও তাদের প্রকাশিত তালিকা খুঁতহীন’ রাখতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। বরং প্রচুর ভুলে ভরা সেই তালিকা নতুন করে ‘শুনানি আতঙ্ক’ তৈরি করেছে বাংলা জুড়ে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ায় মঙ্গলবার শেষ হয়েছে এসআইআরের প্রথম পর্যায়। আগের তালিকায় রাজ্যে ভোটার ছিল ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন। সেখান থেকে মৃত, স্থানান্তরিত, নিখোঁজ, ডুপ্লিকেট হিসাবে চিহ্নিত ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮২৯ জনের নাম বাদ পড়ায় এদিন প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় রয়েছে ৭ কোটি ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৭০০ জনের নাম। দ্বিতীয় পর্যায়ে চলবে তালিকায় থাকা ভোটারদের তথ্য যাচাই করে নাম বাদ দেওয়ার কাজ। সেসময় জেরার মুখোমুখি হতে ডাক পড়বে শুনানিতে।
সেই শুনানিতে ডাক পাওয়ার সংখ্যাটা কত, তা মঙ্গলবার জানাতে পারেন নি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। জাতীয় নির্বাচন কমিশন জমা পড়া তথ্য যাচাই করে এই সংখ্যাটা জানিয়ে দেবে বলে তিনি জানান। ফলে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। এসআইআর শুরুর সময় তালিকায় নাম থাকার আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গোটা বাংলায়। দ্বিতীয় বা যাচাই পর্বে এবার শুনানি আতঙ্ক!
প্রকাশিত খসড়া তালিকায় নাম থাকলেই যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম উঠবে, এজাতীয় কোনও নিশ্চয়তা প্রথম দিন থেকেই ছিল না। কমিশন আগেই জানিয়েছিল, খসড়া তালিকার নাম ওঠা ভোটারদের মধ্যে যাঁদের ক্ষেত্রে তথ্য বা নথিতে অসঙ্গতি থাকবে, তাঁদের শুনানিতে ডাকা হবে। সেই শুনানিতে নথি পত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ‘যোগ্য ভোটার’। শুনানির নোটিশও বুধ বা বৃহস্পতিবার বাড়ি বা়ড়ি গিয়ে পৌঁছে দেওয়া শুরু করবেন বিএলওরা। ফলে সেই নোটিশ কার কপালে নাচছে এবং শুনানি পর্বের জেরায় কী ধরণের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে দুশ্চিন্তা।
তবে মঙ্গলবার সিইও জানান, ‘‘শুনানি কী ভাবে হবে, সে বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এখনও কিছু জানায় নি। তবে আমরা ২৮০০ নতুন ইআরও-কে নিয়োগ করতে ইসিআই-এর অনুমতি চেয়েছি।’’ তিনি জানান, ''যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁরা ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করে সঙ্গে একটি হলফনামা দিয়ে তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ১৮ বছর উত্তীর্ণরা একই ফর্ম পূরণ করে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবে।
কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যের ৩০ লক্ষ ৫৯ হাজার ২৭৩ জন ভোটার ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে নিজেদের কোনও যোগসূত্র দেখাতে পারেননি। এদের সবাইকে শুনানিতে ডাকা হচ্ছে বলেই খবর। পাশাপাশি খসড়া তালিকার প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ভোটারের এনুমারেশন ফর্মে পাওয়া তথ্য সন্দেহজনক মনে হয়েছে কমিশনের। তাঁদেরও শুনানিতে ডাকা হতে পারে বলে খবর। তবে এই সংখ্যাটা কমে শেষ পর্যন্ত এক কোটির কাছাকাছি পৌঁছবে বলে কমিশন কর্তাদের ধারণা।
অন্যদিকে প্রায় ৩৭ দিন বিস্তর দৌড়ঝাঁপের পর মঙ্গলবার প্রকাশিত খসড়া তালিকায় একের পর এক ভুল ত্রুটি বেরনো শুরু হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। খসড়া তালিকায় ভুলত্রুটি থাকার কথা কমিশন স্বীকারও করে নিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল বলেন, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিএলও-রা অ্যাপে তথ্য এন্ট্রি করার সময় ভুল টাইপ করেছেন। সেই ভুল শুধরানোর কাজ চলছে। যদি কোনও বিএলও ইচ্চাকৃত ভুল করে থাকেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
মঙ্গলবার খসড়া ভোটার তালিকা নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তালিকায় নিজের নাম আছে কিনা, তা জানতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমজনতা। তারপরই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে একের পর এক ভুলের হদিশ। যার কোনওটা বিএলও-দের ‘টাইপিং মিসটেক’-জনিত। কোনও কমিশনের ব্যবহৃত সফটওয়্যারের সমস্যাজনিত। কয়েকটি ক্ষেত্রে বিএলওদের ‘ইচ্ছাকৃত ত্রুটি’-ও থাকতে পারে বলে কমিশনের ধরণা।
