স্টাফ রিপোর্টার: বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় বাংলায় বিদ্যুতের দাম অনেক সস্তা। সবথেকে বেশি দাম কর্নাটকে। রাজ্যওয়াড়ি প্রতি-ইউনিট বিদ্যুতের দামের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ১৭ নম্বর স্থানে। বুধবার বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে সেই তথ্য তুলে ধরলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। প্রতি ইউনিট দামের নিরিখে প্রথম স্থানে কর্নাটক, দ্বিতীয় স্থানে অসম, তৃতীয় স্থানে বিহার, চতুর্থ স্থানে মহারাষ্ট্র।
বাংলার থেকে অনেক বেশি বিদ্যুতের দাম উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ুতে। যেখানে কর্নাটকে বিদ্যুতের প্রতি-ইউনিটের দাম ৯.৮৩ টাকা, অসমে ৯.৫৫, বিহারে ৯.১৩, মহারাষ্ট্রে ৮.৯১ টাকা, সেখানে বাংলায় বিদ্যুতের প্রতি-ইউনিটের দাম ৭.১২ টাকা। রাজ্যে বিদ্যুতের দাম নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে এদিন বিধানসভায় বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ইউনিট-পিছু বিদ্যুতের দামের তুল্যমূল্য পরিসংখ্যান তুলে ধরেন অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘রাজধানী দিল্লি ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অসমের মতো বিজেপি-শাসিত ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলোর তুলনায় এ রাজ্যে বিদ্যুতের দাম কম।’’ পাশাপাশি বাংলায় যে লোডশেডিং ইতিহাস হয়ে গিয়েছে, সে প্রসঙ্গও এদিন তুলে ধরেন অরূপ। বিধানসভার প্রশ্নোত্তরপর্বে বিধায়ক অপূর্ব সরকারের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এই রাজ্যে এখন এক মিনিটের জন্যও লোডশেডিং হয় না। ঝড়বৃষ্টির সময়ও যাতে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয় সেজন্য আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল বসানো হচ্ছে। আর বিদ্যুতের দাম নিয়ে যা বলা হচ্ছে তাও ঠিক নয়।’’ দেখা যাচ্ছে, বিজেপি-শাসিত অসমে বিদ্যুতের ইউনিটের দাম ৯ টাকা ৫৫ পয়সা, মহারাষ্ট্রে ৮ টাকা ৯১ পয়সা। যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা।
পাশাপাশি রাজ্য সরকার বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপরও জোর দিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম ও গোয়ালতোড়-সহ বেশ কিছু জায়গায় মোট ১৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। পুরুলিয়া জেলার পিপিএসপি আপার ড্যামে একটি সোলার জেনারেশন ইউনিট স্থাপন প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও সাগরদিঘিতে একটি, বক্রেশ্বরে একটি, সাঁওতালডিহিতে একটি সোলার জেনারেশন ইউনিট স্থাপন প্রক্রিয়া চলছে।
গত ৫ বছরে ডব্লুবিএসইডিসিএল ও ডব্লুবিপিডিসিএল-এর অধীনে নতুন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। সেগুলি হল ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল এবং রানিগঞ্জ, বীরভূমের ঢাকা-১ এবং ঢাকা-২, বাঁকুড়ার মেজিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি। পাশাপাশি নতুন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রও হতে চলেছে। পুরুলিয়া জেলার টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্টের মাধ্যমে ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যে গত পাঁচ বছরে একাধিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। পুরনো কেন্দ্রগুলিকেও সংস্কার করা হচ্ছে। অরূপের কথায়, ''ব্যান্ডেল, সাগরদিঘি ও কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধুনিকীকরণের জন্য ২,৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ব্যান্ডেল (খরচ ৬৫০ কোটি টাকা), সাগরদিঘি (খরচ ১,৬১০ কোটি টাকা), কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (খরচ ৯০ কোটি টাকা)। সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুটি ইউনিট চালু হয়েছে।'' এছাড়া সাগরদিঘিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি নতুন সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার জেনারেশন ইউনিটের কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানিয়েছে রাজ্য। আগামিদিনে নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে চলেছে বক্রেশ্বর, সাঁওতালডিহিতে।