অর্ণব আইচ: পদ্ধতি অনেকটা জামতাড়া গ্যাংয়ের (Jamtara Gang) মতো। অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলেই হত এই জালিয়াতি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) জামতাড়া থেকে নয়, এই জালিয়াতি চালানো হত খাস কলকাতায় বসে। জামতাড়ার জালিয়াতরা কলকাতা-সহ দেশের বড় শহরগুলির বাসিন্দাদের টার্গেট করে। আর কলকাতার এই জালিয়াতদের টার্গেটে ছিলেন মার্কিন মুলুকের বাসিন্দারা। শহরে ভুয়ো কল সেন্টার খুলে আমেরিকার বাসিন্দাদের সাহায্য করার নাম করে তাঁদের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার হাতিয়ে নেয় জালিয়াতরা। এভাবে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে লালবাজারের (Lalbazar) সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এই ঘটনায় তিলজলা ও কসবা এলাকা থেকে শেখ টিপু, আহমেদ ইরশাদ, জোহা খান ও শেখ কামালউদ্দিন নামে চার যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, তিলজলায় খোলা হয়েছিল ভুয়ো কল সেন্টার। কল সেন্টার থেকেই অভিযুক্তরা ফোন করত আমেরিকার বিভিন্ন বাসিন্দাকে। একটি সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে বলত, তারা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগতভাবে সাহায্য করে। কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সমস্যা হলেও তারা সাহায্য করবে। তাদের টার্গেটে থাকত মূলত বয়স্ক মানুষরাই। তারা আমেরিকার ওই বাসিন্দাদের সাহায্যর নাম করেই একটি বিশেষ অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলত। তাঁরা বুঝতেও পারতেন না যে সেটি আসলে মিরর অ্যাপ। ওই অ্যাপের মাধ্যমে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত তারা। প্রথমত দেখে নিত তাঁদের ব্যাংকের লেনদেন।
[আরও পড়ুন: কসবায় ভুয়ো টিকা কাণ্ড: CBI তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের মামলা]
এ ছাড়াও একটি ভাইরাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাঁদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিন কালো বা ফাঁকা করে দিত। এর পর ফের তারা যোগাযোগ করে বলত, তাঁদের কম্পিউটার খারাপ হয়ে গিয়েছে। তরাই একমাত্র সারাতে পারবে। পরোক্ষে ব্ল্যাকমেল করেই তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা চাওয়া হত। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠানো হত। বাধ্য হয়েই মানুষজন ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতেন। এরপর জালিয়াতরাই ভাইরাস সফটওয়্যার অকেজো করে দিয়ে তাঁদের কম্পিউটার সারিয়ে দিত। এভাবে প্রচুর টাকা রোজগার করেছে তারা। এর আগেও কলকাতা থেকে ভুয়ো কল সেন্টার চক্র ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়েছে প্রচুর ডলার ও পাউন্ড। শুক্রবার ৪ জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের ৩০ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতদের জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।