গোবিন্দ রায়: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ক্ষেত্রে, প্রমাণ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার অভিযোগে কোনও পুরুষকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় না। মত কলকাতা হাই কোর্টের। বাঁকুড়ার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দিয়ে হাই কোর্টের বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া সেই মহিলা কখনওই এমনটা দাবি করতে পারেন না যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই পুরুষ তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বলেন, “মামলাকারী মহিলার একটি নির্দিষ্ট বয়ানের উপর নিম্ন আদালত গুরুত্ব আরোপ করেছে। অভিযোগকারিণী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি স্বেচ্ছায় এবং কোনও রকম প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ ছাড়াই ওই পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। পরে আবার তিনিই সেই পুরুষ সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।” আদালতের আরও বক্তব্য, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা একটা ‘কনসেপ্ট’। যেটা এভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ব্যবহার করতে পারেন না।
ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তর আইনজীবী মলয় ভট্টাচার্য ও সুদীপা সেনগুপ্ত জানান, বাঁকুড়ার ছাতনা থানায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস অভিযোগের একটি মামলায় ধর্ষণের অপরাধের ধারা রুজু করেছিল পুলিশ।
আইনজীবীদের দাবি, তাঁদের দুজনের মধ্যে একটি প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। পরে তা বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মামলায় ২০১১ সালের ১২ জুলাই বাঁকুড়া অতিরিক্ত দায়রা আদালত রায়দানে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)-র ৩৭৬ (ধর্ষণ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে। শাস্তি হিসাবে তাঁকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় সাজাপ্রাপ্ত বিশ্বনাথ মুর্মু। আগেই এই মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছিল আদালত।
এবার মামলার নিষ্পত্তি করে বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা যদি কারও সঙ্গে, সম্পূর্ণ পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকেন, তাহলে পরবর্তীতে যথাযথ প্রমাণ ছাড়া সেই মহিলা তাঁর পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন একথা বলা যায় না। যিনি স্বেচ্ছায় এবং কোনওরকম প্রতিরোধ ছাড়াই তাঁর পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, পরবর্তীতে তিনি এভাবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনতে পারেন না, যদি না তাঁর কাছে এই বিষয়ে জোরালো কোনও প্রমাণ থাকে। সম্প্রতি এমন বহু ধর্ষণের মামলা দেখা যায়, যেখানে অভিযুক্ত পুরুষের বিরুদ্ধে বিয়ের ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস বা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করা হয়। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, সেই ধরনের মামলাগুলিতে কলকাতা হাই কোর্টের এই রায়ের উল্লেখ আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।