অর্ণব আইচ: আইএসআইয়ের মদতে বাংলাদেশে শক্তি বাড়াচ্ছে জেএমবি। ফের এই রাজ্যে জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে জামাত-উল-মুজাহিদিনের নেতারা। এবারও জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের মূল টার্গেট এই রাজ্যের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেগুলির কোনওটাই সরকারের অনুমোদিত নয়। এছাড়াও এবার প্রথমে তিনটি জেলায় নতুন জঙ্গি মডিউল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএসআই ও জেএমবি।
এর পর আরও অন্তত চারটি জেলায় তারা মডিউল তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করেছে ও প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি একটি বৈঠকে এই ব্যাপারে রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের সতর্ক করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, এই সতর্কবার্তা পাওয়ার পর কলকাতা ও সারা রাজ্যজুড়ে নতুন করে নজরদারি শুরু করেছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। এছাড়াও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরও শুরু করেছে নজরদারি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে পাক চর সংস্থা আইএসআই। আইএসআইয়ের আধিকারিকরা নিজেরা ও এজেন্ট মারফৎ যোগাযোগ করে চলেছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবির উপর নজর পড়ে গোয়েন্দাদের। ক্রমে এই রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার হতে শুরু করে জেএমবি নেতা ও লিঙ্কম্যানরা। কলকাতা থেকেও গ্রেপ্তার হয় অনেকে। কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের সঙ্গে তৎকালীন বাংলাদেশ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হয়।
এর ফলে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে ওই দেশ থেকেও গ্রেপ্তার হয় বহু জঙ্গি। এক কথায়, দু’দেশেই জেএমবি ও নব্য জেএমবির শিরদাঁড়া ভেঙে দেন গোয়েন্দারা। যদিও এখনও পলাতক জেএমবির মূল মাথা সালাউদ্দিন সালেহিন। গোয়েন্দাদের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাক চর সংস্থা ইতিমধ্যেই নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছে জেএমবির সঙ্গে। এর মধ্যেই জেএমবির কয়েকজন নেতার সঙ্গে রাজসাহী-সহ কয়েকটি জেলার ডেরায় বৈঠক হয়েছে আইএসআই এজেন্ট ও আধিকারিকদের। সূত্রের খবর, আইএসআই আর্থিকভাবেও মদত জোগাতে শুরু করেছে ওই জঙ্গি নেতাদের।
আইএসআইয়ের নির্দেশে জেএমবি টার্গেট করেছে অসম ও এই রাজ্যের কয়েকটি জায়গা। অসমের বরপেটা, নলবাড়ি, ধুবড়িকে জেএমবি টার্গেট করেছে। এ ছাড়াও এই রাজ্যে আপাতত জঙ্গিদের টার্গেট মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর জেলা। এর আগে এই তিনটি জেলায় জেএমবি মডিউল তৈরি করেছিল। এখনও এই জেলাগুলিতে জেএমবির পুরনো স্লিপার সেলের সদস্যরা রয়েছে, যারা এখন সক্রিয় নয়। জেএমবি নেতাদের আইএসআই নির্দেশ দিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি এই তিনটি জেলায় নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। এর পর বীরভূম, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নেটওয়ার্ক তৈরি করছে জেএমবি।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে ছোট ছোট টিমে গিয়ে জেএমবি-র নেতা ও সদস্যরা জেলাগুলির কয়েকটি সরকারি অনুমোদিত নয়, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রথমে শিক্ষকদের মগজধোলাই করে, তার পর ছাত্রদের ক্লাস নিতে হবে। এর আগেও নিজেদের মতো করে বেআইনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল জেএমবি। ক্রমাগত মগজধোলাইয়ের পর শুরু করতে হবে নিয়োগের প্রক্রিয়া। একই সঙ্গে স্লিপার সেলের ‘ঘুমন্ত’ সদস্যদের সক্রিয় করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে টাকাও দিতে হবে তাদের। এভাবে বিশেষ কয়েকটি জায়গায় তৈরি করতে হবে নতুন জঙ্গি মডিউল। বৃদ্ধি করতে হবে জঙ্গি নেটওয়ার্ক।
এর পর নিয়োগ করা সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে আগের পদ্ধতিতে সদস্যদের পাকিস্তান অথবা পাক অধিগৃহীত কাশ্মীরে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও তৈরি করা হতে পারে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। শিবিরে ওই নিয়োগ হওয়া সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে অস্ত্র। তাদের শেখানো হবে বিস্ফোরক তৈরি ও প্রয়োগের উপায়। এর পর শুরু হবে নাশকতা। কারণ, জেএমবি নেতাদের ইতিমধ্যেই ফের বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির ‘স্বপ্ন’ দেখাতে শুরু করেছে আইএসআই। জেএমবি জঙ্গিদের কার্যকলাপ রুখতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পুরনো স্লিপার সেলের সদস্যদের উপর নজরদারি করতে শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।