রমেন দাস: র্যাগিং রোধে ব্যবস্থা কই? ঠিক এই প্রশ্নের মধ্যেই অবশেষে ব়্যাগিং নিয়ে ফের নড়েচড়ে বসল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ! এবার নতুনভাবে গঠিত হল অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি। শুধু কমিটি গঠনই নয়, ওই কমিটির সদস্যদের নাম, ইমেইল অ্যাড্রেস, ফোন নম্বরও ফের প্রকাশ করল বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University) । ১২ সেপ্টেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অফিসের তরফে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে ব়্যাগিং (Anti-Ragging Committee JU) বন্ধে কড়া পদক্ষেপের কথাও জানানো হয়েছে।
কিন্তু একই শিক্ষাবর্ষের জন্য ফের কমিটি কেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ না দিলেও সূত্রের দাবি, মেইন হস্টেলে (Jadavpur Main Hostel) র্যাগিংয়ের অভিযোগ এবং ছাত্রের মৃত্যুর পরই চরম অস্বস্তিতে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ! নানা প্রশ্নের মধ্যেই তখনই চিন্তাভাবনা শুরু হয় অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি নিয়েও। প্রশ্ন ওঠে ওই কমিটির সদস্যদের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র বিরুদ্ধেও। এবার সেই কমিটিই গঠিত হল নতুনভাবে।
[আরও পড়ুন: G-20 সম্মেলনের সফল আয়োজনের নেপথ্য মোদি, ফুলের বৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত বিজেপির]
সিংহভাগ পুরনো সদস্যকে ছেঁটে ফেলে নতুন করে তৈরি হল কমিটি। নয়া অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসাবে বুদ্ধদেব সাউ দায়িত্ব পেতেই এই পদক্ষেপ করল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেও উঠেছে প্রশ্ন, ওই ঘটনার দায় নিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল সেই ডিন অফ স্টুডেন্টস্, রেজিস্ট্রারও পদাধিকার বলে রয়েছেন নয়া কমিটিতেই! কেন তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, বিতর্ক তৈরি হয়েছে এ নিয়েও।
তবে এটি যে নয়া কমিটি, একথা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ৩৩ সদস্যের নয়া কমিটি নয়, পুরনো কমিটি ভেঙেই নতুন করে গঠিত হয়েছে এটি। যদিও বেশিরভাগ পুরনো সদস্যই বাদ গিয়েছেন নতুন কমিটি থেকে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে জানান, ”প্রতি শিক্ষাবর্ষের প্রথমেই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির সদস্যদের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এবার ফের প্রকাশের কারণ হল, কমিটি নতুন করে তৈরি হয়েছে সেখানে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। এই কারণেই নয়া বিজ্ঞপ্তি।”
[আরও পড়ুন: দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের জমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে CISF-জনতা খণ্ডযুদ্ধ, রণক্ষেত্র দুর্গাপুর]
নয়া অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং একাধিক বিভাগের ডিন-সহ রয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরাও। রয়েছেন যাদবপুর থানার (Jadavpur police station) আইসি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি হিসাবে স্নেহাশিস সুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও নতুন অ্যান্টি ব়্যাগিং কমিটিতে রয়েছেন এক অভিভাবকও। অঙ্ক বিভাগের অধ্যাপক কল্লোল পাল, ইংরাজি বিভাগের কৌস্তুভ বক্সি, তথ্যপ্রযুক্তির ভাস্কর সর্দার, গণ-যোগাযোগের পার্থসারথী চক্রবর্তী, রসায়নের সৌভিক হালদার-সহ একাধিক সদস্য যোগ হয়েছে ওই কমিটিতে। যা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। নয়া অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের ‘কাছের অধ্যাপকরা’ জায়গা পেয়েছেন ওই কমিটিতে একথাও শোনা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কান পাতলেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে জানান, ”নতুন কমিটি তৈরি অথবা কোনও কমিটিতে নতুন সদস্য আনা যেতেই পারে। সেখানে কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু গত আগস্টে তৈরি হওয়া ওই কমিটিতে থাকা বহু অধ্য়াপকের নাম মাত্র এক মাসের মধ্যেই বাদ দিয়ে দেওয়া, সেই শিক্ষককে অসম্মান করা বলেই মনে করি।”
প্রসঙ্গত, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্য়াম্পাসে দুপুর ১টায় বৈঠকে বসবে নতুন অ্যান্টি ব়্যাগিং কমিটি। ওই বৈঠকের পরেই ব়্যাগিং সংক্রান্ত বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে খবর। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া উপাচার্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগেও সরব হয়েছেন অনেকেই। অধ্যাপকদের একাংশের দাবি, মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটার বহুদিন পরেও ইউজিসি-র নিয়ম মেনে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য নয়া হস্টেল তৈরির কথা ভাবা হয়নি! বরঞ্চ অন্যদের হস্টেল ফাঁকা করে তাঁদের রাখা হয়েছে। এর সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রাক্তন সেনা এবং সিসিটিভির যত্রতত্র ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার। সরব হয়েছেন বাম মনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবীরা।
উল্লেখ্য, নদিয়ার (Nadia Bagula) বাসিন্দা প্রথমবর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে এক মাসের বেশি সময়। অভিযুক্তরা জেলবন্দি। কিন্তু এর পরেও বারবার প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কেন দিনের পর দিন মেইন হস্টেলে ব়্যাগিং চলার অভিযোগেও ব্যবস্থা নেয়নি অ্যান্টি ব়্যাগিং কমিটি, তা-নিয়েও সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অধ্যাপকদের একাংশ।