shono
Advertisement

Breaking News

থিম সং নয়, সময়ের ইস্তাহার পৌঁছে দিতে ফের সুমন-ভবতোষ যুগলবন্দি

এসবি পার্ক সর্বজনীনের থিম সং যেন খুলে দিচ্ছে ভাবনার অন্য দিগন্ত। The post থিম সং নয়, সময়ের ইস্তাহার পৌঁছে দিতে ফের সুমন-ভবতোষ যুগলবন্দি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 05:27 PM Sep 05, 2017Updated: 03:15 PM Sep 29, 2019

সরোজ দরবার: কে কাকে টেনেছেন অমোঘ আকর্ষণে? কবীর সুমন, ভবতোষ সুতারকে? নাকি উলটোটা? এ প্রশ্নই কন্ট্রোল রুম থেকে স্টুডিও হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে দাঁড়াল কয়েকটা পংক্তির সামনে- ‘পাক খেতে খেতে সটান উপরে আমার আসন/ এখানেই আমি, আমার দুনিয়া আমার শাসন’। আনুষ্ঠানিক উপলক্ষ, এসবি পার্ক সর্বজনীনের থিম মিউজিক রেকর্ডিং। কিন্তু এ আসলে ভাবনার সঙ্গম। দুই শিল্পীর মিলনস্থল। যেখানে ভাবনারা কথা বলছে শিল্পের ভাষায়। আর শিল্পের দুই ধারা যেন মিলেমিশে বাঙালিকে ভাবনায়-শব্দ-সুরে বাঁচতে শেখার ভরসা জোগাচ্ছে।

Advertisement

রেকর্ডিংয়ে আলাপ আলোচনায় দুই শিল্পী:

গতবছরও তাঁরা দু’জন একসঙ্গে এসেছিলেন। থিমে ভবতোষ সুতার। আর গানে কবীর সুমন। নিছকই থিম সং হয়ে থাকেনি তা। সভ্যতার ভার আর ওজনে নুয়ে পড়া বাঁকের মতো সময়ের শিরদাঁড়া- ভাবিয়েছিল দর্শনার্থীদের। শুধু পুজো দেখার আহারে-বাহারে অনুভূতি নয়। ভাবনার রসদ

জুগিয়েছিলেন দুই শিল্পী, পুজো ফুরোলেও যার আবেদন শেষ হয় না। এবছর আবার সেই যুগলবন্দি। এবং যথারীতি শুধু থিম ও থিম সংয়ের বাঁধন কেটে এবারও তাঁদের ভাবনার উড়ান অন্য দিগন্তে। ‘ভবতোষ সুতারের সঙ্গে কাজ করা মানে একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া’, বলছেন সুমন। ‘আমার ‘তোমাকে চাই’ বেরোনোর পঁচিশ বছর হল। একটা কথা কী জানেন, আমার থেকে ভাল শিল্পীকে আমি দেখিনি। ভবতোষ আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা, যিনি আমার থেকেও ভাল, সৃজনশীল। তাঁর কাজ দেখলে চোখ পবিত্র হয়ে যায়। ছেঁদো কোনও ব্যাপার নয়। উনি যদি আজেবাজে কাজ করতেন তাহলে আমি সরে আসতাম। শিল্প যে শুধু শিল্পের জন্য নয়, তার যে প্রাসঙ্গিকতা আছে, সমাজের জন্য সে যে কাজ করতে পারে, এই ভাবনার জায়গা থেকে আমরা কাছাকাছি আসি।,” জানালেন সুমন। কী সেই ভাবনা? যা ভাবিয়ে তুলেছেন সুমনকে? ভবতোষ জানাচ্ছেন, এবার তাঁর ভাবনা- সেলফি। “কনজিউমারিজম একটা শব্দকে এমনভাবে বিক্রি করেছে যে আমরা তার গ্রাসে পড়ে গিয়েছি। একটা আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের অদ্ভুতভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই জায়গাটা আমি তুলে ধরতে চেয়েছি। আর আমি নিছক পুজোশিল্পী হিসেবে থাকতে চাই না। পুজো আমার কাছে একটা মঞ্চ। যেখান থেকে আমি আমার কাজের ভাষায় মানুষকে একটা স্টেটমেন্ট পৌঁছে দিতে পারি”, জানাচ্ছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার।

সুমনের গান, সুমনের ভাষ্য:

এই ভাবনাতেই মণ্ডপ সাজাচ্ছেন ভবতোষ। থাকছে বেশ কিছু ইনস্টেলশন। চেয়ারকে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে। সেলফি নয়, যাঁরা ‘সেলফ’ অর্থাৎ নিজের ব্যক্তিত্বকে ক্যারি করতে পারেন বা পেরেছেন, তাঁদেরকেও দেখানো হবে। অর্থাৎ পুজোর আঙিনায় এ এক আয়নামহলও বটে। আর তার সঙ্গেই সঙ্গতি রেখে সুমন গান বেঁধেছেন। এবং তাঁর পংক্তিতেও উঠে আসছে যুগযন্ত্রণার কথা। “এটা একটা আমি আমি যুগ। আমি ছাড়া আর কিছু নেই। এটা ভয়ংকর। আসলে বাঙালি অনেক ক্ষেত্রে হেরে গিয়েছে। বাংলা ভাষাটা আমরা ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি। আমি যখন বাংলা খেয়াল গাইতে চাইছি, তখন প্রথমেই অনেকে বলছেন বাংলায় হবে না। কেন হবে না? আরও সাতটি ভাষায় খেয়াল গাওয়া হচ্ছে। এই হেরে যেতে যেতে হীনমন্যতা গ্রাস করছে। তা থেকেই নিজেকে জাহির করার প্রয়াস। এটাই সেলফি সময়। আমরা যেটা করছি সেটা নিছক থিম নয়, আমাদের কাজে সময়ই কথা বলছে।,” বললেন কবীর সুমন। বুনোট শব্দের গায়ে সুরের ছুঁইয়ে সে কথা বলাচ্ছেন তিনি নিজেই। গানের শরীরে কখনও জুড়ে দিচ্ছেন হামিং। কখনও বা নিজস্ব মেজাজে টুকরো গায়নে একটা গানকে পৌঁছে দিচ্ছেন অন্য মাত্রায়। যেন সুরের গায়ে সলমাজরির কাজ। আর তা শুনতে শুনতে বিহ্বল ভবতোষ। বলছেন, এর কোনও তুলনা হয় বলো? সত্যি তুলনা হয় না। বাইরে তখন শহর কলকাতায় নেমেছে অকাতর বৃষ্টি।

ভবতোষের ভাবনারা:

থিম, থিম সং পুজোর অঙ্গ। কিন্তু দুই শিল্পী পুজোর মঞ্চকেই যেন বেছে নিয়েছেন সময়ের ইস্তাহার প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে। পুজো মণ্ডপে তাঁরা হয়তো থাকবেন না। কিন্তু থাকবে তাঁদের এই ভাবনা। সেই ভাবনার আড়ালে বসে দুই শিল্পী যেন স্মিত হাসিতে বলে উঠবেন, তোমাকে ভাবাবই ভাবাব, সে তুমি মুখে যাই বলো না…। সেলফি তোলার হিড়িক ভুলে আত্মদর্শনের সে পথে আমরা নামবো তো?

ছবি-আশুতোষ পাত্র

The post থিম সং নয়, সময়ের ইস্তাহার পৌঁছে দিতে ফের সুমন-ভবতোষ যুগলবন্দি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement