সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্টারডম আর অভিনয়ের যুগলবন্দিই ছিল তাঁর হাতিয়ার। অত্যন্ত গুণী এক অভিনেত্রী যেভাবে নিজের স্টারডম সামলাতেন, তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয় ছিল। তাঁকে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য টলিপাড়ার অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীরই হয়নি। কিন্তু তাও শ্রীদেবী ছিলেন বড়ই আপন। খুব কাছের একজন। সৌজন্যে তাঁর অনবদ্য অভিনয়। সেই অভিনয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বাংলা ছবির জগতের অনেকেই। তাই আচমকা তাঁকে হারিয়ে ফেলে কেমন যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
শোকাহত অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরি বলছেন, “শ্রীদেবী নেই, এ নিয়ে আলোচনা নয়, বরং শ্রীদেবী কীভাবে আমাদের মধ্যে রয়ে গেলেন, সে কথাই আজ বলা হোক। শ্রীদেবীর চোখে এক অদ্ভুত চমক ছিল। শুনেছিলাম কোনও শট দেওয়ার আগে নাকি তিনি চোখ বন্ধ করে থাকতেন। শট শুরু হলেই চোখ খুলতেন। আর তখনই এক অসম্ভব চমক ঔজ্জ্বল্য ছিটকে বের হয়ে আসত তাঁর চোখ থেকে। সেই চমকটা নিয়েই আমি বাঁচতে চাই। ১৫ বছর পর ছবির দুনিয়ায় কামব্যাক করেও যে দর্শকদের মন জয় করা যায়, সেটাও শিখিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীদেবী। তাঁর মতো লড়াইয়ের মানসিকতা কজনেরই বা থাকে। তাঁর থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার বাকি ছিল। কিন্তু ছোট গল্পের মতো অসম্পূর্ণই রয়ে গেল এই কাহিনি।”
[অকাল প্রয়াণ ‘রূপ কি রানি’ শ্রীদেবীর, শোকস্তব্ধ বলিউড]
অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র তো মানতেই রাজি নন যে শ্রীদেবী আর নেই। বলছেন, “দারুণ একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আসলে ছিলেন বলতে ইচ্ছা করছে না। খুব ভালবাসি ওঁকে। আমি বিশ্বাসই করব না যে ওঁ নেই। মানবই না শ্রীদেবী প্রয়াত। আমাদের কাছে উনি যেমনটি ছিলেন, তেমনই থাকবেন।”
শ্রীদেবী প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছিল অভিনেত্রী চৈতি ঘোষালের। ফোনে ছেলের থেকে খবরটা শুনে আর কান্না চেপে রাখতে পারেননি। আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন তিনি। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর ছোটবেলার দিনগুলি। বললেন, “মনে হচ্ছে পরিবারের কাউকে হারালাম। ছোটবেলার একটা অংশ হারিয়ে গেল আজ। ছোটবেলায় শ্রীদেবীর ভিডিও ক্যাসেট কিনে এনে তাঁর ছবি দেখতাম। তাঁর মতো পোশাক পরে সাজার চেষ্টা করতাম। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ যে কতবার দেখেছি, মনে নেই। শ্রীদেবীর গলায় কী একটা অসম্ভব সুন্দর মিষ্টতা ছিল। যা আর কারও ছিল না। ওঁকে দেখেই অভিনয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছি।”
শ্রীদেবীর অভিনয়ের অনুরাগী পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। বলছেন, “একজন বড়মাপের তারকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত দক্ষ অভিনেত্রী। আর সেটাই ছিল তাঁর হাতিয়ার। মর্মান্তিক, অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে গেল। তাঁর প্রয়াণে সিনেমা জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।”
[নক্ষত্র পতন, বিশ্বাসই হচ্ছে না শ্রীদেবী নেই]
মন খারাপ জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারেরও। বলছেন, “মুম্বইয়ে অনেকবারই তাঁকে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। অত্যন্ত সাদা-মাটাভাবেই থাকতেন। সহজ-সরল মনের একজন মানুষ ছিলেন। অথচ কত বড়মাপের অভিনেত্রী তিনি। তাঁর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
সুস্থই ছিলেন। শাহরুখ খানের আপকামিং ছবি ‘জিরো’র শুটিও করছিলেন সম্প্রতি। শনিবার পরিবারের সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুবাই পাড়ি দিয়েছিলেন।কিন্তু মাঝপথেই চাঁদের দেশে চলে গেলেন চাঁদনি।
The post চোখের চমক, মিষ্টি গলা আর অনবদ্য এক অভিনেত্রীকে হারিয়ে শোকাহত টলিপাড়া appeared first on Sangbad Pratidin.