শুভঙ্কর বসু: নৃশংস হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে জেলবন্দি ৫ বছরের শিশু। অপরাধের সামাজিক গুরুত্ব এতটাই যে চার্জশিট দিতে দেরি করেনি পুলিশ। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ একরকম প্রমাণিত। পুলিশের অন্তত তেমনটাই দাবি। এখন শুধু বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষা। কিন্তু এসবের মধ্যেই তাল কাটল করোনা ভাইরাস। স্রেফ শিশুটির স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে মানবিক সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা হাই কোর্ট। জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত হলেও অবশেষে শিশুটির দেখভালের জন্য মায়ের জামিন মঞ্জুর করল বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। শিশুটির বাবা-মায়ের উপর এমন কোন জঘন্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে সমাজে যার প্রভাব নাকি সুদূরপ্রসারি? আদালতে অন্তত তেমনটাই দাবি করেছেন সরকারি কৌঁসুলি।
জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত বছর মে মাসে। পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের বাসিন্দা নিতাই কোটালের নাবালিকা মেয়ে এলাকারই একটি ছেলের সঙ্গে প্রণয় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। অভিযোগ, স্থানীয় একটি মন্দিরে তাদের বিয়ে হয় ও বেশ কয়েকদিন তারা একসঙ্গে থাকে। ঘটনার কিছুদিন পর তাদের খোঁজ মেলে। এলাকার লোকজন পরে বুঝিয়ে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে আনে। অভিযোগ, এরপরই ঘটনার হেস্তনেস্ত করতে গ্রামে সালিশি সভা বসে। সেখানে অভিযোগ ওঠে ছেলেটিই নাবালিকা মেয়েটিকে ফুঁসলে নিয়ে গিয়েছিল। গোটা ঘটনার জন্য ছেলেটিকেই দোষী প্রমাণিত করে সালিশি সভার মাতব্বররা।
[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিদর্শনের সময় বিপত্তি, বাঙ্গুর হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা রোগীর]
অভিযোগ, সালিশি সভা শেষে সকলে চলে গেলে নিতাই কোটালের বাড়িতে ছেলেটিকে একটি গাছে বেঁধে চলে বেদম প্রহার। নিতাই ও তার স্ত্রীর নেতৃত্বে ছেলেটির উপর অকথ্য অত্যাচার চলে বলেও অভিযোগ। মারের চোটে ঘটনাস্থলেই ছেলেটি মারা যায়। এই ঘটনায় ফের একবার রাজ্যে সালিশি সভা বা খাপ পঞ্চায়েতের নৃশংসতার ছবি উঠে আসে। পরে ছেলেটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে নিতাই ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে পুলিশ তড়িঘড়ি চার্জশিট জমা দেয়। যদিও বিচার প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
এরপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়তেই জামিনের আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় নিতাই ও তার স্ত্রী। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে শুনানিতে তাদের আইনজীবী সুজন চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুটিও জেলে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ফলে তাদের জামিন মঞ্জুর করা হোক। যদিও আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন সরকারি কৌঁসুলি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু শেষমেশ শিশুটির স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ১০ হাজার টাকার বন্ডে শুধুমাত্র শিশুটির মায়ের জামিন মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও আদালতের শর্ত, প্রয়োজন মনে করলে যে কোনও সময় জামিন খারিজের নির্দেশ দিতে পারে নিম্ন আদালত।
[আরও পড়ুন: সাধারণ ওয়ার্ডেও করোনা পজিটিভ রোগী, সংক্রমণ নিয়ে চূড়ান্ত আশঙ্কায় জুনিয়র ডাক্তাররা]
The post সালিশি সভায় নৃশংস হত্যার দায়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে জেলবন্দি শিশু, সুরাহা হাই কোর্টে appeared first on Sangbad Pratidin.
