অর্ণব আইচ: ফ্রিজের সবজি রাখার ট্রে-র মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ পালংশাক। সঙ্গে অন্য শাকপাতাও। অন্যান্য শীতের সবজি থেকেও বেশি পালং ও শাকপাতা দেখেই সন্দেহ হয় লালবাজারের গোয়েন্দাদের। শীতের সবজি সরিয়ে পালংয়ের আঁটি খুলতেই তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার সোনা।
উত্তর কলকাতার সিঁথি এলাকার সোনার গয়নার ওয়ার্কশপের সামনে থেকে তিন কোটি টাকার সোনার গয়না লুটের ঘটনায় সোনা উদ্ধার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। গত ২৯ অক্টোবর সিঁথিতে ওই ওয়ার্কশপের কর্মী পোস্তা থেকে স্কুটারে করে তিন কোটি টাকার সোনা নিয়ে আসেন। পিস্তল দেখিয়ে সেই সোনা ডাকাতি করে স্কুটারটি নিয়ে পালায় দুই ডাকাত। এই ডাকাতির ছক সাজিয়েছিল আরও দু’জন। তাদের মধ্যে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সম্প্রতি ডাকাতি গ্যাংয়ের মাথা ইজরায়েলকে কলকাতা স্টেশনের কাছ থেকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। তাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে যে, ইজরায়েল ও উত্তরপ্রদেশের আব্বাস ওই লুঠের সোনা অর্ধেক করে ভাগের ছক কষে। আব্বাস উত্তর শহরতলিতে স্কুটার ফেলে রেখে হুগলিতে চলে যায়। ইজরায়েল, মাসুম-সহ গ্যাংয়ের বাকি তিনজনও যায় হুগলির খানাকুলে। সেখানে লুঠের সোনার প্রায় অর্ধেক নিয়ে আব্বাস চলে যায়। যদিও সে আদৌ উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে গা ঢাকা দিয়েছে, নাকি অন্য কোথাও, তা নিয়ে গোয়েন্দারা সন্দিহান।
ইজরায়েলের কাছে সোনা গচ্ছিত রয়েছে, তা জানার পর সোনা উদ্ধার করতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ জেরা করে। কিন্তু বিভিন্নভাবে সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। শেষপর্যন্ত গোয়েন্দা আধিকারিকরা ইজরায়েলকে নিয়েই হুগলির খানাকুলে তার বাড়িতে যান। একেক বার সে একেক জায়গায় সোনা রেখেছে বলে জানাতে থাকে। আবার কখনও বা বলে, সোনা সে কোথায় রেখেছে, তার মনে নেই। যদিও গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, ইজরায়েলের বাড়িতেই রয়েছে সোনা। তাই গোয়েন্দারা আলমারি থেকে খাটের তলা, সব জায়গায় তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালান। বাদ যায় না রান্নাঘরও।
শেষপর্যন্ত ফ্রিজও খুলে ফেলেন গোয়েন্দারা। ডিপ ফ্রিজে মাছ-মাংস রয়েছে। ফ্রিজের তলার দিকে সবজির ট্রের মধ্যে রয়েছে ভর্তি শাকপাতা ও পালংশাক। উপরের দিকে রয়েছে অন্যান্য সবজি। কিন্তু তা পরিমাণে অনেকটাই কম। বরং পালংশাকের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তা দেখেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। তাঁকে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে খুলতে শুরু করেন পালং শাকের আঁটি। শেষ পর্যন্ত পালংয়ের আঁটি খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সোনা। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, ওই সোনার পরিমাণ প্রায় ১,২০০ গ্রাম। উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের বাসিন্দা পলাতক আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা গেলে বাকি সোনার হদিশ মিলতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
