গৌতম ব্রহ্ম: সব আবিষ্কারের মূলেই রয়েছে প্রয়োজন। করোনা (Corona Virus) কালে এই প্রয়োজন খুব ভালভাবেই বুঝেছিলেন ডা. রামেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায় (Dr Ramendra Lal Mukherjee)। কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ৮৮ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। হাসপাতালে ভরতি হতে না হলেও সেদিন বুঝেছিলেন কোভিডের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরের গুরুত্ব কতখানি। নেগেটিভ হওয়ার পর তাই আর দেরি করেননি। মাত্র ২০ দিনেই কোভিড (COVID-19) রোগীদের জন্য বানিয়ে ফেলেছেন বিশেষ ‘পকেট ভেন্টিলেটর’। দাম তার ১২ হাজার টাকা।
‘পকেট ভেন্টিলেটর’ই (Pocket Ventilator) বটে! ওজন মাত্র ২৫০ গ্রাম। একবার চার্জ দিলে ন্যূনতম ৮ ঘণ্টা চলে। সাধারণ মোবাইল চার্জারে (অ্যান্ড্রয়েড টাইপ ২) অনায়াসে চার্জ দেওয়া যায়। সুতরাং যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কোনও সমস্যা নেই। ডা. মুখোপাধ্যায়ের বিশ্বাস, কোভিড ও মিউকরমাইকোসিস(Mucormycosis) সামলাতে ছোট্ট এই ভেন্টিলেটর অত্যন্ত কাজে দেবে।
[আরও পড়ুন: মার্চ থেকেই কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ে ATM জালিয়াতরা, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
কীভাবে কাজ করবে এই ছোট্ট যন্ত্রটি?
‘পকেট ভেন্টিলেটর’-এর দু’টো ভাগ রয়েছে। একটি পাওয়ার ইউনিট, অন্যটি মাউথ পিস যুক্ত ভেন্টিলেটর ইউনিট। সুইচ অন হলে বাইরের বাতাস যন্ত্রে মজুত আল্ট্রা ভায়োলেট চেম্বার (UV chamber) দিয়ে বিশুদ্ধ করিয়ে সজোরে ফুসফুসে পাঠায়। চেম্বারের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় বাতাসে কোনও জীবাণু থাকলেও তা মরে যায়। রোগী যখন নিঃশ্বাস ছাড়েন, তখনও একই কায়দায় বাতাসকে আল্ট্রা ভায়োলেটে শুদ্ধ করে ছাড়ে এই যন্ত্র। ফলে ডাক্তার বা নার্স বা রোগীর আশপাশে মজুত মানুষজনের কোনও সমস্যা হবে না। এই যন্ত্রটি হাসপাতালে ব্যবহৃত সিপ অ্যাপ (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার) যন্ত্রের ভাল বিকল্প বলেই জানালেন ডা. মুখোপাধ্যায়।
ভয়াবহ হয়ে ওঠা কোভিড সামলাতে দেশে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাও সংখ্যায় প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই পরিস্থিতিতে রামেন্দ্রবাবুর এই আবিষ্কার বাড়িতে থাকা রোগীদের কাছে সঞ্জীবনী হয়ে উঠবে। হঠাৎ করে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করলে দিন কয়েক এই যন্ত্রই সামলে দিতে পারবে ‘ক্রাইসিস’। এমনই আশা ৩০টি আবিষ্কারে পেটেন্টের মালিক এই বাঙালি বিজ্ঞানীর। রামেন্দ্রবাবু নিজে একজন ইঞ্জিনিয়ার, এমন প্রচুর এমন আবিষ্কার রয়েছে তাঁর। তবে অতিমারী (Pandemic) আবহে তাঁর ‘পকেট ভেন্টিলেটর’ কোনও বিপ্লবের চাইতে কম নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।