গৌতম ব্রহ্ম ও শেখর চন্দ্র: হকার উচ্ছেদ, বেআইনিভাবে জমি দখল, পুকুর ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ - রাজ্যজুড়ে এ ধরনের কার্যকলাপের মৌরসিপাট্টা ভাঙতে তৎপর প্রশাসন। দফায় দফায় নবান্নে বৈঠক ডেকে নেতা, মন্ত্রী, পুরসভার কাউন্সিলরদের কড়া বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নে ফের হকারদের বৈঠকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে নতুন বেশ কিছু সমাধান সূত্র দিয়েছেন। তারই মাঝে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আরএসএসকে নিশানা করলেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন, পুকুর বুজিয়ে আরএসএসের যে কার্যালয় তৈরি হয়েছে, তা কেন ভাঙা হচ্ছে না?
কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক শহরে জলাশয় (Wet land) বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণের ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে। সেসব কানে এসেছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানেরও। আর এসব সমস্যা সমাধানে নবান্নে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবারের পর বৃহস্পতিবার সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ''আমি শুনেছি, মলয় (মন্ত্রী মলয় ঘটক) আমাকে বলছিল যে আসানসোলে একটা পুকুর বুজিয়ে কোনও একটা রাজনৈতিক দল একটা তিনতলা বাড়ি বানিয়েছে। কিন্তু সেটা ভাঙা হচ্ছে না কেন? পুলিশকে নাকি বার বার বলা হয়েছিল, পুলিশ অ্যাকশন নেয়নি। কারণ, শুনেছি ওই বাড়িটা আরএসএসের (RSS) কার্যালয়। তৃণমূলের কোনও বেআইনি নির্মাণ যদি ভাঙা হয়, তাহলে আরএসএসের কার্যালয় কেন ভাঙা হবে না?''
[আরও পড়ুন: উচ্ছেদ নয়, বিকল্প ভাবনা, হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে একাধিক নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর]
এর পর মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, ''আগে দেখতে হবে ওই জমির রেকর্ড কী আছে। যদি ওটা জলাশয় জমি হয় মানে ল্যান্ড (Land) রেকর্ডে যদি তা থাকে, তাহলে সেই জলাশয় বুজিয়ে কার্যালয় তৈরি তো অপরাধ। সেইমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আগে ভালো করে রেকর্ড দেখে নিতে হবে। কারও মুখের কথায় কিছু হবে না।'' এ প্রসঙ্গে মমতার মুখে দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড়ের কথাও শোনা গেল। তিনি বললেন, ''আমি তো প্রায়ই শুনতে পাচ্ছি বিক্রমগড় এলাকায় নাকি জমিগুলো সব দখল হয়ে যাচ্ছে। এ কি ছেলের হাতের মোয়া নাকি? চাইলেই সব দখল করে নেওয়া যায়।'' উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকের পরই তৎপর হয়ে ইতিমধ্যে খড়গপুরের (Kharagpur) একটি ভরাট জলাজমি খোঁড়া শুরু হয়েছে।
[আরও পড়ুন: সাধুদের নিয়ে মন্তব্য জনস্বার্থ মামলা নয়, হাই কোর্টের রায়ে স্বস্তিতে মুখ্যমন্ত্রী]
মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া বার্তার পরেই আসানসোলের (Asansol) আরএসএস কার্যালয়ে পৌঁছে গেলেন আসানসোল পৌরনিগম এবং BLRO দপ্তরের আধিকারিকরা। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাউথ ধাদকার জে সি বোস লেনে আরএসএস ভবন রয়েছে। আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন। আইনজীবী পীযুষকান্তি গোস্বামী বলেন, ''ওঁরা কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে চান। আমাদের কাছে যা ছিল আমরা সেই তথ্য দিয়েছি। অন্যান্য কাগজপত্র আমাদের সেন্ট্রাল অফিসে রয়েছে। ওঁদের বলেছি, যদি কোনও অভিযোগ আছে আমাদের নোটিস করুন।''
আসানসোলের সেই আরএসএস কার্যালয়ে বিএলআরও এবং পুরনিগমের আধিকারিকরা। ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়।